আহমদ হাসান: রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের মৃত্যুদিন ৯ ডিসেম্বর চলে গেল। সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল এবং ‘ভূমি’ নামে একটি সংগঠন কলেজ স্ট্রিট কফিহাউসের ছোট একটি সভাঘরে ৯ ডিসেম্বরকে স্মরণ করে অনুষ্ঠান করেছে।
এছাড়া পুবের কলম পত্রিকা ৯ ডিসেম্বর উপলক্ষে কম করে ৪টি বড় নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। আর ‘গণশক্তি’ও প্রকাশ করেছে একটি নিবন্ধ।
এছাড়া মহিয়সী রোকেয়ার যেখানে স্কুল ও বাসভবন ছিল, বর্তমানে তা ভেঙে সেই ১৬২-বি এজেসি বোস রোডে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া তাদের নেতার স্মরণে ‘ভূপেশ ভবন’ তৈরি করেছে। রোকেয়ার নাম বিলকুল গায়েব! তবে বিশ্বকোষ পরিষদের পার্থ সেনগুপ্ত এবং প্রফেসর আমজাদ হোসেন, আহমদ হাসান ইমরান প্রমুখের চেষ্টায় ভূপেশ ভবনের সামনে গড়ে উঠেছে ছোট একটি ‘রোকেয়া মিনার’।
এখানেও বিশ্বকোষ পরিষদের সদস্য ও অনুরাগীরা ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া মিনারে মাল্যদান করেন। দুঃখের কথা, পশ্চিমবঙ্গ সরকার কিংবা কলকাতা পুরসভা রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্মৃতি সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগই নেয়নি। অবশ্য এই ধরনের উদ্যোগ মুসলিম কোনও জননেতার ক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গে লক্ষ করা যায় না।
যেমন, হাজি মুহাম্মদ মহসীন, মাওলানা আকরম খাঁ, স্যার জাস্টিস জাহিদ সোহরাওয়ার্দি, ড. হাসান সোহরাওয়ার্দি, শেরেবাংলা ফজলুল হক, স্যার আজিজুল হক, সৈয়দ বদরুদ্দোজা প্রমুখ শ্রেষ্ঠ পুরুষদের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। বর্তমান বাঙালি প্রজন্ম এদের নাম ও অবদানের কথা সম্পূর্ণ ভুলে যাচ্ছে। এদের স্মৃতি সংরক্ষণের কোনও ব্যবস্থা করতে কাউকেই উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না।
মহিয়সী রোকেয়াকে কবর দেওয়া হয়েছিল সোদপুরে তাঁর আত্মীয় আবদুর রহমান সাহেবের বাগান বাড়িতে। দেশ ভাগের পর সেই কবরটিও হারিয়ে গেছে এবং তার কোনও চিহ্ন এখন আর নেই। এর থেকে দুঃখের আর কি হতে পারে!
সাহিত্যিক এস ওয়াজেদ আলি, সৈয়দ বদরুদ্দোজা, এশিয়ার দন্ত চিকিৎসার জনক আর আহমেদের কবরগুলিও পুরসভা সংরক্ষণের কোনও উদ্যোগই নেয়নি। সেগুলি আর চেনার উপায় নেই। যদিও অনেকেই পয়সা দিয়ে কবরের জায়গা কিনে রেখেছিলেন।
এবার ফিরে আসা যাক রোকেয়ার কথায়। একাধারে তিনি ছিলেন শিক্ষা বিশেষ করে নারী শিক্ষার প্রসারে অগ্রণী অগ্রপথিক। ছিলেন বহু পুস্তকের লেখিকা। প্রবন্ধ, নিবন্ধ, ছোট গল্প, উপন্যাস, কবিতা সবক্ষেত্রেই ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ।
তিনি মুসলিম নারী সংগঠনেরও ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা (আনজুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম)। নারী মুক্তি ও নারী শিক্ষা প্রসারে তাঁর প্রভাব শুধু কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গে সীমাবদ্ধ নেই। তা ছড়িয়ে গেছে অসম, ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশেও। এ সম্পর্কে ঢাকার বাংলা অ্যাকাডেমি ও অন্যান্য প্রকাশনী থেকে বেশকিছু গবেষণামূলক পুস্তক রয়েছে।
অনেকেরই বক্তব্য, ডায়মন্ডহারবারে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছেন। শিক্ষাব্রতী ও অগ্রণী চিন্তাবিদ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের নামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করার দাবি কি খুব অপ্রাসঙ্গিক হবে?
এই মহিয়সী নারীর স্মৃতিতে ডায়মন্ডহারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ হলে তাতে একদিকে যেমন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়টির মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে ছাত্রীদেরও প্রেরণা জোগাবে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখতে। আমাদের সুশীল সমাজ কি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এই আর্জি জানাবেন?