পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বগটুই কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত লালন শেখের মৃত্যুর ঘটনায় ক্রমশই রহস্য বাড়ছে। এই অবস্থায় খুনের অভিযোগ উঠেছে পরিবারের তরফে। এই ঘটনায় এদিন রামপুরহাটের সিবিআই অস্থায়ী ক্যাম্পের সামনেও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে পুলিশি নিরাপত্তা। ইতিমধ্যে বগটুইয়ে সিবিআই ক্যাম্পের নিরাপত্তায় কলকাতা থেকে পাঠানো হয়েছে এক কোম্পানি সিআরপিএফ।
এদিকে লালন শেখের রহস্যমৃত্যুতে এবার সিবিআইয়ের বিরুদ্ধেই এফআইআর দায়ের করল পুলিশ। লালন শেখের মৃত্যুতে আগেই পুলিশের কাছে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে তার পরিবার। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সিবিআই আধিকারিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করল পুলিশ।
সিবিআই-এর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ও ১২০ বি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। পরিকল্পনামাফিক খুন ও খুনের ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ করার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মঙ্গলবারই আনা হবে লালনের দেহ।
সূত্রের খবর, দেহ উদ্ধারের সময়ে লালনের পা মাটিতে লাগানো ছিল। তাহলে গলায় ফাঁস লাগল কীভাবে? সে সব প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এই মৃত্যু ঘিরে সিবিআইকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন মৃত লালনের দিদি সামসুন্নেহার।
সোমবার বিকেলে এই খবর চাউর হতেই পরিজনেরা রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে হাজির হন। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে আনতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁরা। অতিরিক্ত মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সঙ্গে সঙ্গে সিউড়ি থেকে রামপুরহাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তারপর পুলিশের তরফে পরিবার খবর পায় বলে সূত্রের খবর। লালনকে নিয়ে সিবিআই অস্থায়ী ক্যাম্পে পৌঁছে গিয়েছিল। সেখানে বাথরুমের কোমোডের কিছুটা উপরে লালনের মৃতদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২১ মার্চ ১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বগটুই মোড়ে বোমা মেরে খুন করা হয় বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের ভাদু শেখকে। খুনের বদলা নিতে ওই রাতেই বগটুই গ্রামের একাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় ১০ জনের। তাদের মধ্যে ৯ জন মহিলা। ঘটনার পরদিন রাজ্য সরকার সিট গঠন করে। দু’দিন পর হাইকোর্টের নির্দেশে ঘটনার তদন্ত হাতে নেয় সিবিআই।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় তৃণমূলের রামপুরহাট-১ নম্বর ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনকে। সিবিআই তদন্ত হাতে নেওয়ার পর ২১ জুন প্রাথমিক চার্জশিট জমা দেয়। ওই চার্জশিটে লালন শেখকে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মূল অপরাধী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
অন্যদিকে, ভাদু শেখ খুনের প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবেও তার নাম ছিল। কারণ লালন ছিল ভাদুর ছায়াসঙ্গী। ভাদুকে খুনের সময় লালন পাশেই ছিল বলে জানা গিয়েছে। ফলে লালনের রহস্যজনক মৃত্যুতে বগটুই-কাণ্ডে বহু তথ্য অজানা থেকে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ঘটনার আট মাস পর তিন ডিসেম্বর ঝাড়খণ্ডের নরোত্তমপুর থেকে সিবিআই বড় লালনকে গ্রেফতার করে। দশ তারিখ তাকে ফের সিবিআই রামপুরহাট আদালতে তোলে। সিবিআই ছ’দিনের হেফাজত চাইলে আদালত তার তিনদিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেয়। মঙ্গলবার তাকে ফের আদালতে তোলার কথা ছিল।