দ
দেবশ্রী মজুমদার শান্তিনিকেতন : আন্দোলনরত ছাত্রদের দিকে আঙুল তুলে দায় ঝেড়ে ফেললো বিশ্বভারতী। পাশাপাশি, বর্তমান পরিস্থিতিতে পৌষ উৎসব যে অনিশ্চিত তারই ঈঙ্গিত দিল বিশ্বভারতী। এমনতেই উপাচার্য চব্বিশ নভেম্বর থেকে গৃহবন্দী থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত কাজ কর্ম শিকেয় উঠেছে। এমনকি অনিয়মিত হয়েছে উপাসনালয়ে মন্দির।
সোমবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সভাগৃহে বিশ্বভারতীর সমস্ত আধিকারিক, বিভাগীয় অধ্যক্ষ, সমস্ত জয়েন্ট রেজিস্ট্রার, অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার, ডেপুটি রেজিস্ট্রার এবং রেজিস্ট্রার উপস্থিত হয়ে এক যোগে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে গৃহবন্দী করে রাখার তীব্র নিন্দা করা হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন সংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তেইশে নভেম্বর বিকেলে এক ছাত্রী এবং আরেক প্রাক্তন ছাত্র গেট টপকে গিয়ে উপাচার্যর অফিসে ঢুকে পড়েন। ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সরকারের পুলিশ, উপাচার্যর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী, একজন কর্মী এবং একজন অধ্যাপক। পরে সমস্ত গেটে তালা মেরে দেয় আন্দোলনকারীরা। তাদের কাছে লিখিত দাবি চাইলেও, তা না দিয়ে শুধুমাত্র উপাচার্যর পদত্যাগ চাওয়া হয়। এছাড়াও অশ্রাব্য এবং অসাংবিধানিক ভাষায় উপাচার্যকে গালিগালাজ করা হয়। সেখানে সেই সময় উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য। তিনি তাদের এহেন আচরণে উৎসাহ দেন। রাত এগারোটা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের বার বার বলা হয় তাদের দাবি সুনির্দিষ্ট আকারে জানাতে। কিন্তু তারা মৌখিকভাবে উপাচার্যর পদত্যাগ চায়। পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো লাভ হয় নি। তেইশে নভেম্বর রাত আড়াইটা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা রক্ষী ও কর্মীরারা উপাচার্যকে উদ্ধার করেন। তারপর চব্বিশে নভেম্বর থেকে অদ্যাবধি উপাচার্যকে গৃহবন্দী করে অবস্থান বিক্ষোভ করছে আন্দোলনকারীরা। ভাঙচুর করা হয়েছে আধিকারিক তন্ময় নাগ ও উৎপল হাজরার বাড়ি। সমাবর্তন না হওয়ার কারণ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে বিশ্বভারতী।
উল্লেখ্য, সুদীপ্ত ভট্টাচার্যর বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে উৎসাহিত করার অভিযোগে একটি চার্জশিট দেওয়া হয়। সেখানেও একই অভিযোগ তোলা হয়। কর্মসমিতিতে আলোচনার মাধ্যমে তদন্ত কমিটি গঠন করার আগে সুদীপ্ত ভট্টাচার্যর নাম উল্লেখ করা নিয়ে তদন্তের গতি প্রকৃতি নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন।
সোমবারের প্রেসমিটে উপাচার্য ঘেরাও নিন্দা করে বিশ্বভারতীর তরফে বলা হয়, আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা তাদের লিখিত দাবি জানায় নি। কিন্তু আন্দোলনকারী সোমনাথ সৌ ও ছাত্রী মীনাক্ষী ভট্টাচার্য জানান, অনেক বার লিখিত আকারে দাবি জানিয়েও তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হয় নি বলেই আজকে তাদের ধর্ণায় বসতে হয়েছে। আর তাছাড়া উপাচার্য আদালতের নির্দেশ না মেনে ছাত্র ভর্তি আঁটকে রেখেছেন। পিএইচ ডি গবেষণা পত্র জমা দিতে দিচ্ছেন না। তিনি জানেন না, তারা কি চান, এটা বিশ্বাসযোগ্য? এদিকে নয় ডিসেম্বর ছাত্র ছাত্রীদের আন্দোলন রুখতে বে আইনী জমায়েত, ভাঙচুর সহ বিভিন্ন ধারায় বোলপুর আদালতে মামলা দায়ের করে বিশ্বভারতী, বলে সূত্রের খবর। এটিও গোপন করে বিচারাধীন বিষয়ে প্রেসমিট করলো কর্তৃপক্ষ। উপাচার্যর মূল অভিযোগের তালিকায় মীনাক্ষী ভট্টাচার্য, সোমনাথ সৌ, সুদীপ্ত ভট্টাচার্য, কৌশিক ভট্টাচার্য প্রমুখ। সোমবার ছিল তার সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ বলে জানা গেছে। পাশাপাশি, এদিন কেন্দ্রের জাতীয় শিক্ষা নীতি নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় শিক্ষা নীতি ও নতুন পিএইচডি নিয়মাবলির নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বিরোধিতা করেন বিদুৎ চক্রবর্তী।