হাইলাইটসঃ এবার কাতার বিশ্বকাপে যে ফুটবল ‘খেলা হচ্ছে, তার নাম ‘আল রিহালা’, মানে সফর বা ভ্রমণ। অতীতের সব বলের থেকে এটা সম্পূর্ণ আলাদা, বলা যায় প্রযুক্তি নির্ভর। তৈরি করেছে ‘অ্যাডিডাস’ কোম্পানি।
পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ ‘আল রিহালা’, ‘ইবনে বাতুতা’ ও ‘কাতার বিশ্বকাপ’, জানেন কি এই তিনটির মধ্যে যোগসূত্র কোথায়? আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই অজানা তথ্য। বিশ্ব বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা নিজের ভ্রমণবৃত্তান্ত একটি বইয়ের মধ্যে লিপিবদ্ধ করেন, সেই বইটি ‘দ্যা রিহালা’ নামে পরিচিত ছিল। নামটি আপনার কাছে চেনা চেনা লাগছে কি? লাগারই কথা! কারণ এটি হচ্ছে কাতার বিশ্বকাপের অফিসিয়াল বলের নাম। ‘আল রিহালা’ একটি আরবি শব্দ। যার বাংলা অর্থ হল সফর বা ভ্রমণ। কাতার বিশ্বকাপের জন্য এই স্পেশ্যাল বলটি তৈরি করেছেন বিশ্বের অন্যতম ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাডিডাস’। প্রতিটি বিশ্বকাপের বল তৈরির পিছনে থাকে নানান গল্প। নামকরণের নেপথ্যে থাকে বিশেষ কোনো ভাবনা।
অনেকের প্রশ্ন, কোন ভাবনা থেকে কাতার বিশ্বকাপের অফিসিয়াল বলের নাম ‘আল রিহালা’ রাখা হয়েছে?
বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, কাতারের সংস্কৃতি, স্থাপনা, ঐতিহ্যবাহী নৌকা ও পতাকা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বলটির নাম ‘আল রিহলা’ রাখা হয়েছে।
এই বলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য কী?
এই প্রসঙ্গে বল প্রস্তুতকারী সংস্থাটি অ্যাডিডাসের দাবি, বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুতগতির বল হবে এটি। ম্যাচে গতি আরও বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই বলটির নকশা এভাবে করা হয়েছে। বিশ্বের সেরা খেলাকে আরও বেশি নিখুঁত করার জন্য এবং ফুটবলারদের সুবিধার্থে এইরকম বল তৈরি করা হয়েছে। ফিফা তার অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে আল রিহালা বলের গুণগত মান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বলের গঠন, আকৃতি ও রঙ নির্ধারণ করা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় দেশটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে। সাদা ধবধবে বলটির মধ্যে নিয়ন গোলাপি, নিয়ন হলুদ ও সমুদ্র নীল রঙের ছোঁয়া বলটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। বলটি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে চামড়া এবং পলিয়েস্টর ফ্যাব্রিক। এছাড়া, আল রিহালা’ই প্রথম বিশ্বকাপ বল যা তৈরি করা হয়েছে বিশেষ জল রঙ এবং আঠা দিয়ে। সর্বোপরি কাঁচামালের যথাসম্ভব অপচয় রোধ করে পরিবেশবান্ধব উপায়ে কাতার বিশ্বকাপের বলটি তৈরি করা হয়েছে।
এখানেই কী শেষ?
নাহ্, আল রিহালা-র বৈশিষ্ট্য এখনও বাকি আছে। ‘আল রিহালা’ বলের ভিতরের ফাঁপা অংশ তার আকৃতির কারণে ভিতরের বাতাস ধরে রাখার পাশাপাশি ধারাবাহিক গতিতে মুভ করবে। যার জন্য ফুটবলারদের পাসিং অ্যাকুরেসি অনেক বৃদ্ধি পাবে।অ্যাডিডাসের পরীক্ষাগারে বলটি বায়ুর টানেলে ভাসিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে দেখা গিয়েছে বাতাসের মধ্যেও বলটির গতিপথ ঠিক আছে। অর্থাৎ ফুটবলারদের দূরপাল্লার শটে এই বিশ্বকাপে গোল করার সুযোগও অনেক বেশি থাকবে। প্রযুক্তির ছোঁয়া প্রতিনিয়তই ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় বলের ভিতর ও বাইরে নতুন প্রযুক্তি স্থাপন করেছে অ্যাডিডাস। আল রিহালা’য় ১২টি বড় এবং ৮টি ছোট প্যানেল ব্যবহার করা হয়েছে। এই ২০টি প্যানেলের মানসম্পন্ন চামড়া তথা স্পিডশেল দিয়ে এই বল তৈরি করা হয়েছে। বলটিতে থাকছে ‘সিআরটি কোর’ এবং ‘স্পিডশেল’। যা ভিএআরকে আরো আধুনিক করে তুলবে। যাতে বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে নির্ভুল ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন রেফারিরা।
‘আল রিহালা’ নিয়ে আশাবাদী ফিফার মার্কেটিং ডিরেক্টর জঁ-ফ্রাঁসোয়া পাথি। তিনি বলেছেন, ‘এটি একটি অসাধারণ, টেকসই এবং উঁচু মানসম্পন্ন ম্যাচ বল।’ উল্লেখ্য, গত ২০ নভেম্বর পর্দা উঠছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া আসর ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২-এর। রোমাঞ্চকর এই প্রতিযোগিতাটি এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশ কাতারে। উপসাগরীয় দেশ কাতারের আল বায়েত স্টেডিয়ামে ২০ নভেম্বর উদ্বোধনী ম্যাচ ও ১৮ ডিসেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামে সমাপনী ম্যাচ। ফিফা বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে এবারেই প্রথম কোন মুসলিম রাষ্ট্রে সর্বকালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশ্ববাসীকে সুন্দর একটি বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা উপহার দিতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে তারা।