পুবের কলম প্রতিবেদক: বেশ বড় মুখ করে ঢাক ঢোল পিটিয়ে চালু করা হয়েছিল আধার কার্ড। কার্যত জোর করে তা চাপিয়ে দেওয়া হয় আমজনতার ঘাড়েও। সেই সঙ্গে আধারের সঙ্গে প্যান কার্ড, ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট, মোবাইলের নম্বর সব কিছু জুড়তেও কড়া নির্দেশিকা জারি করেছিল মোদি সরকার। কিন্তু এখন তাঁদেরও মনে হচ্ছে আধার কার্ড আর দেশের সবথেকে সুরক্ষিত পরিচয়পত্র নয়। মানে এখানেও ঢাহা ফেল মোদি সরকার। নেপথ্যে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নকল আধার কার্ড।
আধার নিয়ন্ত্রক ও পরিচালন সংস্থা ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া বা ইউআইডিএআই সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশে এখনও পর্যন্ত ৭ লক্ষ ভুয়ো আধার কার্ড বাতিল করা হয়েছে সরকারি ভাবে। কিন্তু দেশে এখনও প্রায় ৭০ লক্ষ ভুয়ো আধার কার্ড রয়েছে বলেই তাঁদের ধারনা। আর এই ভুয়ো আধার কার্ড ধরতে এবার বাংলা-সহ দেশের সব রাজ্যগুলির দ্বারস্থ হয়েছে মোদি সরকার। রাজ্যগুলিকে আধার ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক ভাবে চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ধারণা, জাল আধারের শিকড় ছড়িয়ে অনেক গভীরে। এই ধরনের ভুয়ো আধার কার্ড তৈরিকে রীতিমতো কুটির শিল্প তথা লাভজনক ব্যবসায় পরিণত করেছে একটা চক্র। তাই জাল আধার নির্মূল করতে বাধ্য হয়ে ইউআইডিএআই-কে এবার অভিযানে নামিয়েছেন তাঁরা। এই জাল আধার কার্ডের সঙ্গে দেশের সুরক্ষার বিষয়টিও জড়িয়ে যাওয়ায় তা নিয়ে রীতিমত উদ্বেগে পড়েছে মোদি সরকার।
কেননা, জাল আধার ব্যবহার করে সরকারি পরিষেবায় নাম লেখানো, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং বিভিন্ন সরকারি কার্ড তৈরি চলছে রমরমিয়ে। কেন্দ্র সরকারের বেশিরভাগ প্রকল্পেরই সুবিধা পেতে হলে সবার আগে আধার কার্ড প্রয়োজন। কিন্তু ভুয়ো পরিচয়পত্র ব্যবহারের ফলে প্রকৃত উপভোক্তারাই তার সুবিধা পাচ্ছেন না।
এর পাশাপাশি, অন্যের আধার-তথ্য হাতিয়ে, শুধু ছবি বদলে নানাবিধ কাজ হাসিল করে নিচ্ছে এক শ্রেণির প্রতারক। বিপদে পড়ছেন সাধারণ কোনও নাগরিক। একই সঙ্গে সামনে এসেছে, আধার ট্র্যাক করে দুষ্কৃতীদের নাগাল আর পাচ্ছে না পুলিশ। সব থেকে বড় কথা এখন নকল আধার কার্ডে ভুয়ো নম্বর ব্যবহার করা হচ্ছে। আর সেই ভুয়ো কার্ড দিয়ে অপরাধমূলক ঘটনা ঘটানোর পরে পুলিশ তার তদন্তে নেমে ওই নম্বরের কোনও অস্তিত্ব আধারের সরকারি পোর্টালে পাচ্ছেই না।
তাই এই সব কিছু নিয়ে বেশ উদ্বেগে রয়েছে মোদি সরকার। সেই উদ্বেগের অবসান ঘটাতে এবার রাজ্যগুলিকে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে কেন্দ্র।
মোদি সরকারের দাবি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধার নম্বর দেখেই অনেক পরিষেবা, কেনাকাটা, অ্যাকাউন্ট খোলা, ফর্ম দেওয়া বা জমা নেওয়া হয়। অর্থাৎ ওই আধার কার্ডের নম্বরটি প্রকৃত সত্য কি না, তা যাচাই করা হয় না। এটাই ভুয়ো আধার চক্রগুলির হাতে চাঁদ তুলে দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে ভেরিফিকেশন আবশ্যিক করা ছাড়া উপায় থাকছে না। এজন্য কিউআর কোড এবং ফেস রেকগনিশন দুটোই ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক হচ্ছে। আধারের ক্ষেত্রে ডেমোগ্রাফিক ম্যাচিং মেকানিজম আরও শক্তিশালী করার নির্দেশও জারি হয়েছে।