বিশেষ প্রতিবেদন: ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে বিশ্বে। ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তার প্রতি ৮ জনের মধ্যে ১জনের মৃত্যু হয়েছে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে। ২০১৯ সালে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে বিশ্বে মোট ৭৭ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে যা হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগের পরে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। নতুন এক গবেষণা বলছে, দরিদ্র দেশগুলোতে সংক্রমণের হার সবচেয়ে ভয়াবহ। তবে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সবার স্বাস্থ্যের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এর থেকে রক্ষা পেতে হলে ওষুধ নিয়ে গবেষণায় আরও বেশি অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। বর্তমান যেসব অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে তা প্রয়োগে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ ২০১৯ ও গ্লোবাল রিসার্চ অন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (গ্রাম) স্টাডি ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এ গবেষণায় বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার গবেষকের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রতিবেদনটি ল্যানসেটে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় করোনা মহামারি শুরু হওয়ার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ২০৪টি দেশ ও অঞ্চল জুড়ে ৩৩টি সাধারণ ব্যাকটেরিয়া প্যাথোজেন ও ১১ ধরনের সংক্রমণের কারণে যেসব মৃত্যু হয়েছে তা পর্যালোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদন মতে, বিভিন্ন মাইক্রোঅর্গানিজম এজেন্ট বা প্যাথোজেন বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে ৭৭ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়েছে। যা বিশ্বব্যাপী ওই বছর মোট মৃত্যুর ১৩.৬ শতাংশ।
৩৩টি ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে মাত্র পাঁচটি ব্যাকটেরিয়া অর্ধেক মৃত্যুর জন্য দায়ী। এ গুলো হলো- স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস, এসচেরিচিয়া কোলাই বা ই-কোলাই, স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনিয়া, ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়া ও সিউডোমোনাস অ্যারুগিনোসা। ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের পরিচালক, গবেষণার সহ-লেখক ক্রিস্টোফার মারে বলেছেন, ‘এই ফলাফলগুলিকে বিশ্বব্যাপী নজরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যাতে অত্যন্ত মারাত্মক এই রোগজীবাণুগুলো শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা কমানো যায়।’ গবেষণাটি দরিদ্র এবং ধনী অঞ্চলের মধ্যে তীব্র পার্থক্যও নির্দেশ করে।
সাব-সাহারান আফ্রিকায় ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে প্রতি ১ লক্ষ জনসংখ্যায় ২৩০ জন মারা গেছে। ধনী দেশগুলোতে এই সংখ্যাটি প্রতি ১ লক্ষ লোকের মধ্যে ৫২-এ নেমে এসেছে। গবেষণা বলছে, ছোট অসুখে অ্যান্টিবায়োটিকের নির্বিচার প্রয়োগের ফলে মারাত্মক অসুখবিসুখের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা অনেকখানি কমে যায়।