উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়,সুন্দরবন : সুন্দরবনের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পথের ক্যানিং থেকে ঝড়খালি রেললাইন সম্প্রসারণ কি আদৌ শেষ হবে সেই প্রশ্নই এখন সুন্দরবনের মানুষদের কাছে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচছে।কবে শেষ হবে নাকি আদৌ শেষ হবে না এই কাজ।বিশ্বের ঐতিহ্যমন্ডিত স্থান গুলির মধ্যে সেরা বাদাবন এই সুন্দরবন,স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছরে দেশজুড়ে আজাদী কি অমৃত মহা উৎসব চলছে অথচ ক্যানিং ঝড়খালি রেললাইন সম্প্রসারণ আজ ও অধরা থেকে গেল।গত ২০০৮ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর তদানীন্তন লোকসভার অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বাসন্তীর কুলতলীতে সুন্দরবন কৃষ্টি মেলার লোক সংস্কৃতি উৎসবে এসে মেলা কমিটির চেয়ারম্যান তথা সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ তৎকালীন সদস্য লোকমান মোল্লার কাছ থেকে লক্ষাধিক সুন্দরবনবাসীর স্বাক্ষর সম্বলিত ক্যানিং ঝড়খালি রেললাইন সম্প্রসারনের আবেদন পত্র নিজের হাতে হাতে তুলে দেন।সেখান থেকে দিল্লিতে ফিরে তদানীন্তন রেলমন্ত্রীর লালু প্রসাদ যাদব কে চিঠি লেখেন ২০০৯ সালের ২রা জানুয়ারি এই রেলপথের অনুমোদন সংক্রান্ত বিষয় গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য। তারপর রেল বোর্ড নড়ে চড়ে বসে, কয়েক মাস পরে কেন্দ্রীয় সরকার পরিবর্তন হয় ,রেলমন্ত্রী হন বর্তমান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।উনি রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুন্দরবনের এই রেলপথের শিলান্যাস ও কাজ শুরু করে দেন। তারপরে রাজ্যের পালা বদলে ২০১১ সালে মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।এই রেলপথ সম্প্রসারণ মূল উদ্যোক্তা ছিলেন তৎকালীন সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ সদস্য লোকমান মোল্লা দিল্লিতে গিয়ে রেল রাষ্ট্রমন্ত্রী অধীর রঞ্জন চৌধুরী সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সবিস্তারে ব্যাখ্যা করে এবং আমন্ত্রণ করে সুন্দরবন কৃষ্টি মেলায় আনেন, কৃষ্টি মেলায় যাওয়ার পথে অধীর চৌধুরী বিভাগীয় রেল আধিকারিকদের নিয়ে মাতলা নদীর উপর রেল ব্রিজ তৈরির অস্থায়ীঅফিসে মিটিং করে বন্ধ হয়ে যাওয়া কাজ শুরু করে দেন। আবার সরকার পরিবর্তন হয়ে যায়, ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার আসে, রেলমন্ত্রী হন সুরেশ প্রভু, লোকমান মোল্লা তখন দিল্লিতে গিয়ে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ রাষ্ট্রমন্ত্রী সুরেন্দ্র সিং আলুওয়ালিয়া সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সবিস্তারে বিষয়টি জানান, আলু ওয়ালিয়া লোকমান মোল্লাকে সঙ্গে নিয়ে সুরেশ প্রভুর সঙ্গে দেখা করে সুন্দরবনের এই রেলপথের গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য বলেন এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে সুন্দরবনবাসীর গণস্বাক্ষর সম্বলিত আবেদনপত্রের সঙ্গে চিঠি লিখে রেলমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।।এর পরে লোকমানকে সঙ্গে নিয়ে সুরেশ প্রভু সঙ্গে আলোচনা সময়কালে এই রেলপথের গুরুত্ব নিয়ে লোকমান বাবু বিস্তারিত তথ্য দেন, রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু বিভাগীয় আধিকারিকদের ডেকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেখার জন্য নির্দেশ দিলেন। কিছুদিন বাদ রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ে ক্যানিংঝড়খালি রেল লাইন সম্প্রসারণ এর কাজ ও বন্ধ হয়ে যায়।এর পরে রেলমন্ত্রী হন পীযূষ গোয়েল। লোকমান মোল্লা আবার সুন্দরবনবাসীদের আবেদন নিয়ে রেল দপ্তরে হাজির হয়ে যান। ইতিমধ্যে লোকমান বাবু এই বিষয় টি সবিস্তারে চিঠির মাধ্যমে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে আবেদন জানান ক্যানিং ঝড়খালি রেললাইন সম্প্রসারণ বিষয় ,পিএমও অফিসের নির্দেশে রেলের ডেপুটি চিপ ইঞ্জিনিয়ার ২০১৮ সালে লোকমানকে চিঠি দিয়ে জানান ক্যানিং ঝড়খালি রেললাইন সম্প্রসারণের জন্য ফাইনাল সার্ভে সম্পূর্ণ হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের জন্য অতিরিক্ত জেলা শাসক ভূমি অধিগ্রহণ দক্ষিণ ২৪ পরগণাকে কম্পিটেন্ট অথরিটি করা হয়েছে, এবং গুরুত্বপূর্ণ মাতলা ব্রিজ এর কাজ শুরু হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কাজ শুরু হয়নি পরে লোকমান আবার পীযূষ গোয়েলকে লেখেন তার চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে রেলের বলিষ্ঠ আধিকারিক উত্তর দেন রেল বোর্ড আপাতত কাজটি বন্ধ রেখেছে। ২০২১ সালের শেষের দিকে ত্রিপুরা থেকে নির্বাচিত রাজ্যসভা সিপিআইএম সংসদ শ্রীমতি ঝরনা দাস বৈদ্যর দিল্লির কোয়াটার গিয়ে বিষয়টি দৃষ্টিতে আনেন, শ্রীমতি ঝর্না দাস বৈদ্য সুন্দরবনবাসীদের আবেদনপত্র সহ বর্তমান রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব কে রেলপথের গুরুত্ব নিয়ে চিঠি লেখেন। বর্তমান রেল মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব শ্রীমতি ঝরনা দাস বৈদ্য কে জানিয়েছেন রেল দপ্তর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অসমাপ্ত লিংক রেল লাইন সম্প্রসারণ কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করার চেষ্টা করছে, তাছাড়া সুন্দরবনের এই রেলপথের ক্ষেত্রে জমি সমস্যা ও পরিবেশ দপ্তরে ছাড়পত্র সহ নানাবিধ সমস্যা রয়ে গেছে। সে কারণে আপাতত সম্প্রসারণের কাজ হচ্ছে না। লোকমান বলেন তিনটি পর্যায়ে ক্যানিং ঝড়খালি রেললাইন সম্প্রসারণের কাজ হবে বলে, রেল দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছিল এবং তিনটি পর্যায়ে অনুমোদিত ব্যয় বরাদ্দ ক্যানিং ভাঙ্গনখালি, ৪.৮৪কি মিঃ ১ ২৩.২৭ কোটি,টাকা,ভাঙ্গন খালি বাসন্তী১৪ .৩০কিঃমি ২০৮ .৪৬ কোটি টাকা,বাসন্তী ঝড়খালি ২৩ কি মি ২১২.৬০ কোটি টাকা।এ ব্যাপারে লোকমান মোল্লা বলেন বিশ্বের ঐতিহ্যমন্ডিত স্থান, জাতীয় অভয়ারণ, পৃথিবীর সেরা বাদাবন হলো সুন্দরবন, ্প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ পর্যটন প্রেমী সুন্দরবন আসে, তাছাড়া আর্থ সামাজিক পরিকাঠামগত দেশের পিছিয়ে পড়া কৃষি প্রধান এলাকাগুলির মধ্যে সুন্দরবন অন্যতম ,এই রেলপথ সম্প্রসারণ হলে সুন্দরবনের হতদরিদ্র বেকার যুবক যুবতী কৃষক শ্রমিক ছাত্র-ছাত্রী থেকে সর্বস্তরের নাগরিকগণ শহর এবং শহরতলীর সাথে প্রত্যহ যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের জীবন জীবিকার উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারবে, ইতিমধ্যে এই রেলপথকে কেন্দ্র করে লোকমান মোল্লা নেতৃত্বে সমাজের সর্বস্তরের নাগরিকদের নিয়ে নাগরিক কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়েছে সোনাখালীতে। আগামী দিনগুলিতে এই রেলপথ সম্প্রসারণ এর বিষয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে সুন্দরবন বাসী নামবে বলে তিনি জানান।কিন্তু এখানে প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি ক্যানিং ঝড়খালি রেললাইন সম্প্রসারণ অধরা থেকে যাবে? সুন্দরবনবাসীদের স্বপ্ন কি স্বপ্নই থেকে যাবে।এর উওর কে দেবে সুন্দরবন বাসীদের। -++