পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ নাজাতুল্লাহ সিদ্দিকি শনিবার ইন্তেকাল করেছেন। ৯১ বছর বয়সে আমেরিকায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন বলে জানা গিয়েছে। ইসলামি স্টাডিজে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৮২ সালে কিং শাহ ফয়সাল পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ সময় অধ্যাপনা করেছেন। বিদেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কৃতিত্বের সঙ্গে পড়িয়েছেন। বিশ্বে ইসলামি অর্থনীতিকে জনপ্রিয় করে তোলার পিছনে তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে।
তিনি বলেছিলেন, ‘ইসলামি অর্থনীতি সমকালীন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুসলিম চিন্তাবিদদের জবাব।’ এর উপর বেশ কিছু গবেষণাধর্মী বইও লিখেছেন তিনি। উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর লেখা বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে সাড়া ফেলেছিল।
সিদ্দিকির লেখা আরবি, ফারসি, তুর্কি, ইন্দোনেশিয়ান, মালয়শিয়ান, থাইসহ অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ‘ব্যাঙ্কিং উইদাউট ইন্টারেস্ট’ (১৯৮৩) গ্রন্থটির তিনটি ভাষায় ২৭টি সংস্করণ বের হয়েছে।
বিশ্বের ২২০টির অধিক লাইব্রেরিতে তাঁর এই বিখ্যাত গ্রন্থটি স্থান পেয়েছে। মুসলিম ইকনমিক থিঙ্কিং (১৯৮১), ইকনমিক এন্টারপ্রাইজ ইন ইসলাম (১৯৭২), ইস্যুজ ইন ইসলামিক ব্যাঙ্কিং, সিলেক্টেড পেপারস (১৯৮৩), ইনস্যুরেন্স ইন অ্যান ইসলামিক ইকনমি (১৯৮৫), রোল অফ স্টেট ইন ইসলামিক ইকনমি(১৯৯৬) গ্রন্থগুলির মাধ্যমে তিনি অর্থনীতির দুনিয়ায় নতুন সম্ভাবনার আলোচনা উপস্থাপন করেন।
ইসলামি অর্থনীতিতে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮২ সালে তাঁকে কিং ফয়সাল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছিল। দেশের অন্যতম বৃহৎ সামাজিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামি হিন্দের সঙ্গে তিনি জড়িয়ে ছিলেন।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল মজলিশে শূরার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ড. নাজাতুল্লাহ সিদ্দিকি। তাঁর ইন্তেকালে শোকপ্রকাশ করেছেন জামায়াতের সর্বভারতীয় সভাপতি সাদাতউল্লাহ হুসাইনি। এক বিবৃতিতে তিনি জানান, ড. নাজাতুল্লাহ হুসাইনির মৃত্যুর খবরে আমরা গভীর শোকাহত। ইসলামি অর্থনীতিতে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। ইসলামি ব্যাঙ্কিংয়ের ধারণার অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন তিনি। বিদেশে বসবাস করলেও ভারতের বহু প্রতিষ্ঠানে তিনি বুদ্ধিবৃত্তিক সেবাদান করে গেছেন।
১৯৩১ সালে গোরক্ষপুরে জন্ম নাজাতুল্লাহ সিদ্দিকির। পড়াশোনা আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পরবর্তীতে তিনি অর্থনীতি ও ইসলামি স্টাডিজে অধ্যাপনা করেছেন। সউদি আরবের কিং আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও অর্থনীতি পড়িয়েছেন তিনি। ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে।
যুক্ত ছিলেন জেদ্দার ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের সঙ্গেও। ভারত, সউদি আরব, নাইজেরিয়ার বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি অসংখ্য পিএইচডি থিসিসের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করেছেন। অ্যাকাডেমিক জগতে তিনি ছিলেন প্রশংসনীয় স্থানের অধিকারী। বক্তৃতা দেওয়ার জন্য দেশবিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ডাক পড়ত। সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির উন্নতির জন্য সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন তিনি।