নিজস্ব প্রতিবেদক: কোমর কষে ঝাঁপিয়ে নবান্ন দখল করতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা। বাংলা দখলের স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে। উল্টে কয়েকদিন আগে বিহারের ক্ষমতা থেকেই ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বিজেপিকে ভাগিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। আর সেই অপমানের বদলা নিতে এবং দুই রাজ্যের ক্ষমতার বৃত্ত থেকে দূরে থাকার কষ্ট ভুলতে এবার বিহার ও বাংলার একাংশ নিয়ে নতুন এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ার নয়া ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আর ওই ষড়যন্ত্রের পর্দাফাঁস করে দিয়েছে এক সর্বভারতীয় সংবাদপত্র। রাজ্যভাগের জন্য কেন্দ্রের নয়া পরিকল্পনার কথা ফাঁস হতেই গর্জে উঠেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায়।
শনিবার তিনি পাল্টা হুঙ্কার ছুড়ে বলেছেন, ‘ব্রিটিশ আমলে যেভাবে বঙ্গ ভঙ্গ রুখে দিয়েছিল বাংলার মানুষ, এবারও সেই ভাবে রুখে দেবে। জনমতকে অপমান করার যোগ্য জবাব পাবে বিজেপি।’ বঙ্গ ভঙ্গ নিয়ে অমিত শাহের অধীনস্ত মন্ত্রকের পরিকল্পনার পর্দাফাঁস নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বাক-সর্বস্ব বাংলার বিজেপি নেতারা।
সর্বভারতীয় সংবাদপত্র ‘লোকমত টাইমস’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি বিহারের কিষাণগঞ্জ ও নিউ জলপাইগুড়ি ঘুরে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আর দুই এলাকা ঘুরে যাওয়ার পরেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের দোহাই পেড়ে দুই রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলাকে নিয়ে নতুন একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পদস্থ আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন। আর প্রভুর ওই নির্দেশের পরেই পোষাভৃত্যের মতো বাংলা ও বিহারের কোন-কোন জেলা নিয়ে নয়া কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ে তোলা হবে তা নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের আধিকারিকরা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, উত্তরবঙ্গের আটটি, রাঢ বঙ্গের তিনটি জেলার পাশাপাশি বিহারের কিষাণগঞ্জ, আরারিয়া, কাটিহার ও পূর্ণিয়া জেলাকে নিয়ে নয়া কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ে তোলা হবে।
নয়া কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে মোট ১২০টি বিধানসভা কেন্দ্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তার মধ্যে ৪০টি বিহারের এবং ৮০টি পশ্চিমবঙ্গের। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের শাসনভার নিজেদের হাতে যাতে পাকাপোক্তভাবে রাখা যায় সেই বন্দোবস্থ করা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, বাংলা ও বিহার ভাগ করে নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ার পিছনে নেপথ্য কুশলী হিসেবে কাজ করছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। তিনিও বেশ কয়েকবার গোপনে বিহার ও বাংলার যে সব জেলা নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ে তোলা হবে সেই জেলা ঘুরে গিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই নয়া কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ার প্রাথমিক কাজ শুরু হবে।
অমিত শাহের এমন পরিকল্পনার কথা ইতিমধ্যেই টের পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েও বঙ্গ ভঙ্গের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে এসেছেন তিনি। স্পষ্ট জানিয়ে এসেছেন, কোনও ভাবেই যেন ভাগাভাগির রাজনীতিকে প্রশ্রয় না দেন উত্তরবঙ্গের মানুষ। তাঁর কথায়, ‘বঙ্গ ভঙ্গ নয়, বঙ্গ সঙ্গ থাকুক।’
বিহারের সঙ্গে বাংলার একাংশ নিয়ে নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ার পরিকল্পনার পর্দাফাঁস হওয়ার পরে গর্জে উঠেছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। শনিবার দলের জাতীয় মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় সুর চড়িয়ে বলেছেন, ‘গত বছর বিধানসভা ভোটে বাংলার মানুষ ঘৃণাভরে বিজেপিকে প্রত্যাখান করেছেন। লজ্জাজনক হারের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে ঘুরপথে বাংলার একাংশ দখল করার অভিপ্রায়ে এই কৌশল নিয়েছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব।’