পুবের কলম প্রতিবেদক: বুধবার শিলিগুড়িতে একটি সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, ‘অনেকে অনেক মিথ্যা কথা বলে বেড়াচ্ছেন। সিঙ্গুর থেকে টাটাকে তৃণমূল কংগ্রেস তাড়ায়নি, তাড়িয়েছে সিপিআইএম। ওরা জোর করে কৃষকদের জমি নিয়েছিল। আমরা সেই জমি ফিরিয়ে দিয়েছি।’
মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবিকে ঘিরে সরব হয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলগুলি। তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী নিজে মিথ্যা বলছেন। তবে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন করছেন রাজ্যের মন্ত্রী ও কলকাতা পুরনিগমের মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বৃহস্পতিবার তিনি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রয়ের জন্মদিন উপলক্ষে একটি কর্মসূচিতে যোগ দেন। দক্ষিণ কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশানে সিদ্ধার্থবাবুর মূর্তিতে মাল্যদান করার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখী হন ফিরহাদ।
এ দিন ফিরহাদ হাকিম সিঙ্গুর প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও ভুল কথা বলেননি। তার কারণ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলন টাটার বিরুদ্ধে ছিল না। তৎকালীন সিপিআইএম তথা বামফ্রন্ট সরকারের জমি অধিগ্রহ নীতির বিরুদ্ধে এই লড়াই সংগ্রাম ছিল। ভারতবর্ষের মতো একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জোর করে পুলিশ দিয়ে সাধারণ মানুষের জমি সম্পত্তি ও জমির অধিকার কখনও কেড়ে নেওয়া যায় না। সেটাই করতে চেয়েছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। জোর করে জমির অধিকার হরণের বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্দোলনে নেমেছিলেন।
ফিরহাদ হাকিমের আরও বক্তব্য, সিঙ্গুর নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলন সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। টাটাকে যদি কারখানার জন্য জমি দিতেই হত, তাহলে কেন সে সময় বামফ্রন্ট নেতৃত্বাধীন সরকার ল্যান্ডব্যাঙ্ক তৈরি করে টাটাকে তা থেকে জমি দিল না। কেন জোর জবরদস্তি করে দু’ফসলি, তিনফসলি জমি মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে টাটার হাতে তুলে দেওয়া হল? প্রশ্নও তোলেন ফিরহাদ হাকিম।
যদিনও এ দিন ঘটনাচক্রে সিঙ্গুরের প্রাক্তন বিধায়ক ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, মমতার ধরনার জন্যই টাটারা সিঙ্গুর ছেড়ে চলে গিয়েছে। শুধুমাত্র সিপিএমের জন্য টাটা চলে গেছে এটা আমি বিশ্বাস করি না। তিনি আরও বলেন, তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধির সামনে শাসক ও আন্দোলনকারীদের যে চুক্তি হয়েছিল, সেই চুক্তি বাতিল করে দিয়েছিল সিপিএমের পলিটব্যুরো। সম্ভবত সেজন্য মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সিপিএম টাটাদের তাড়িয়েছে।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ঠিক বলছেন না বলে দাবি করে মাষ্টারমশাই বলেন, ‘সেই চুক্তির কপি কখনও টাটাদের কাছে পৌঁছয়নি। কারখানার গেটের সামনে ঘটে যাওয়া একের পর এক ঘটনার জেরেই টাটারা সিঙ্গুর ছেড়ে চলে যান।’
তবে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের বক্তব্যের পালটা দিয়েছেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, ‘ওনার বয়স হয়েছে। অনেক কিছুই ভুলে গিয়েছেন। উনি জানেন না উনি কী বলছেন।’
প্রাক্তন মন্ত্রীর অবসর নেওয়া দরকার বলেও মন্তব্য করেন ফিরহাদ।