সেখ কুতুবউদ্দিন: হাসপাতালে ভর্তি রোগী। কিন্তু হদিশ নেই ঠিকানার। খোঁজ পাওয়া যায়নি বাসস্থানের। পাঁচ বছরের বেশি সময় আগে হাসপাতালে ভর্তি করে গিয়েছেন পরিজন অথবা অন্য কেউ। কিন্তু তাদের কেউ আর খোঁজ নিতে আসেনি। কবে যে এই রোগীরা বাড়ি ফিরে পাবেন, তা কেউ জানেন না। এমন ১০ জন সুস্থ রোগী রয়েছেন এসএসকেএম হাসপাতালে।
হাসপাতালের মাঠে মর্নিংওয়াক। এর পর খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমোনোর ব্যবস্থা সূচি মেনেই করানো হয় তাঁদের। এই সব ‘আপাতসুস্থ রোগীদের’ রা’খা হয়েছে আলাদাভাবে।
‘পুবের কলম’কে এসএসকেএম-এর ইন্সটিটিউট অব সাইকিয়াট্রি বিভাগের প্রধান ও ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. অমিত কুমার ভট্টাচার্য বলেন, এমন ১০ জন রোগী রয়েছেন। রোগীদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি রোগীদের মানসিক অবসাদ কাটাতে ভ্রমণের ব্যবস্থাও করা হয়ে থাকে। এ বছর হাসপাতালের একঘেয়েমি কাটাতে পুজোর সময় তাঁদের সরকারি বাসে করে ঘোরানোর ব্যবস্থা করা হয়। সারাবছর বাড়ি ছেড়ে হাসপাতালে থাকলেও পুজোর সময়ে সকলে ঘরে ফেরেন। পরিবারকে জড়িয়ে থাকেন। ওঁদের ক্ষেত্রে তেমনটা হয় না। কারও বাড়ির ঠিকানা মনে নেই, কারও বা সে ঠিকানায় আর জায়গা নেই। কেউ আবার পরিবারের লাঞ্ছনার ভয়ে বাড়ি ফিরতে চান না। তাই বলে উৎসবের মরশুমে একাও থাকতে চান না। তাই মানসিক অবসাদগ্রস্ত রোগীদের ঘোরানো হয়েছে।
তাঁদের দেখাশোনার জন্য রয়েছেন নার্স, চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মী। তাঁদের জন্য সবরকম ব্যবস্থা রয়েছে। অমিতবাবুর কথায়, এঁদের মধ্যে ২ থেকে ৩ জনের ঠিকানার সূত্র পাওয়া যেতে পারে। তার সন্ধান চলছে। ঠিকানা না পাওয়া এই রোগীদের নিয়ে আগামীতে কী পরিকল্পনা রয়েছে, এই সম্পর্কে চিকিৎসকের বক্তব্য, কোনও ঠিকানা বা বাসস্থান না পাওয়া গেলে তাঁদের হোমে রাখা যায় কি না, সেই বিষয়েও চিন্তাভাবনা রয়েছে। তবে রোগীদের সুস্থতার দিকেই লক্ষ্য রেখেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালের এই বিভাগের উদ্যোগে কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় মানসিক রোগ এবং অপমৃত্যু নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে ক্যাম্প করা হচ্ছে। তবে এই কাজে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করেছেন এসএসকেএম হাসপাতালের ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়।
ডা. অমিত ভট্টাচার্যের কথায়, বিগত কয়েক বছরে বহুগুণ মানুষের মানসিক অবসাদ বেড়ে গিয়েছে। অবসাদের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, দৈনন্দিন কাজের চাপ বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া মানুষের প্রত্যাশাও বেড়ে যাচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিন্তিত ওই ১০ রোগীকে নিয়ে। কীভাবে স্থায়ী ঠিকানা পাবেন