কৌশিক সালুই বীরভূম:– দুই ব্যক্তিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে প্রাক্তন পুলিশ কর্মী সহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের সাঁইথিয়া থানার এলাকায়। অভিযুক্তদের পাল্টা দাবি পাওনা টাকা আদায়ের চেষ্টা, কোনভাবেই অপহরণের ঘটনা নয়। ধৃত ব্যক্তিদের রবিবার সিউরি আদালতে তোলা হলে বিচারক চার দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেন। পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, অপহরণের ঘটনায় ধৃত ব্যক্তিরা হলেন গাড়ি চালক করিম শেখ, প্রাক্তন পুলিশ কর্মী আব্দুল হান্নান, মোঃ আইনুদ্দিন, শেখ বোরহান এবং মাধাই মণ্ডল। অপহৃত ব্যক্তিরা হলেন জীবন কৃষ্ণ গঁড়াই, বয়স প্রায় ৫৩ বছর। বাড়ি সাঁইথিয়ার চক মহেশপুর গ্রামে এবং আনাই সেখ বাড়ি লাভপুর থানা এলাকায়। ধৃত ব্যক্তিদের রবিবার সিউড়ি আদালতে তোলা হলে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট সোমনাথ কুন্ডু তাদের চার দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে সাত দিনের হেফাজতের চাওয়া হয়েছিল। অপহৃত ব্যক্তিদের পরিবার সূত্রে দাবি করা হয়েছে শনিবার সকাল ৮টার সময় ডাক্তার দেখানোর জন্য ভাড়া গাড়িতে করে বের হন । তারপর দুপুর ২.১৫ নাগাদ জীবন বাবুর ছেলে অনুপ গঁড়াইয়ের কাছে একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে । ২৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয় । টাকা পাঠানোর জন্য দুটি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও একটি বেসরকারি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নাম্বারও দেয় অপহরণকারীরা
। অপহরণের দিন বিকেলে ২ লক্ষ টাকা দেওয়া হয় মাধাই মন্ডল নামে এক ব্যক্তির এবং তার বাড়ি মুর্শিদাবাদের ভরতপুরে । অনুপ গড়ায় সাঁইথিয়া থানায় রাত্রে অভিযোগ দায়ের করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক রায়ের নেতৃত্বে সি. আই সিউড়ি ও চারটি থানার ওসি মিলে অপহরনকারী ও অপহৃত ব্যক্তিদের খোঁজ শুরু করে। ইতোমধ্যেই ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নাম্বার খতিয়ে দেখে এবং মোবাইল টাওয়ার লোকেশন করে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে ফেলে পুলিশ। মুর্শিদাবাদের সালার থেকে ও বীরভূম থেকে পাঁচজনকেই গ্রেফতার করে দুই অপহৃত কে থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়। যদিও অপহরনের ঘটনায় ধৃত ব্যক্তিরা দাবি করেছেন মূল্যবান ধাতু দেওয়ার নাম করে জীবন এবং আনাই তাদের কাছ থেকে ১১ লক্ষ টাকা নেয়। কিন্তু বিগত তিন মাস ধরে সেই ধাতু বা টাকা কোন কিছুই তারা দিতে পারেনি। সেই টাকা আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন। যদি অপহরণের ঘটনা ঘটতো সেক্ষেত্রে নগদ টাকা দাবি করা হতো। কোনোভাবেই অ্যাকাউন্ট নাম্বার দিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা হতো না। পাশাপাশি অপহৃত ব্যক্তিরাও স্বীকার করেছেন ঝাড়খণ্ডের কিছু ব্যক্তির কাছে তারাও টাকা দিয়ে বহু মূল্যবান ধাতু কিনতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। প্রসঙ্গত ঝাড়খণ্ড রাজ্যের আদিবাসী অধ্যুষিত কিছু এলাকায় ইউরেনিয়াম ধাতু দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠে আসে বিভিন্ন সময়ে। এই ঘটনাই এভাবেই প্রতারিত হয়েছেন সকলে।
সিউড়ি আদালতের ভারপ্রাপ্ত সরকারি আইনজীবী মোক্তাব হোসেন বলেন, অপহরণের অভিযোগের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে সাত দিনের হেফাজত চাওয়া হলে বিচারক চার দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেছেন। বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন,”অপহরণের অভিযোগে ঘটনায় এক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মীসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিচারক চার দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেছেন অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার তদন্ত শুরু করা হবে”।