বিশেষ প্রতিবেদন : সিকিওর ফিউচার চাই। চাই পায়ের তলার মাটি। ছোটো থেকেই মা শিখিয়েছিল সুস্মিতা মণ্ডলকে। এক বাক্যে কথাগুলো বলল সুস্মিতা। তার মতো বর্ণালী বর, নাসরিনা খাতুন, বিদিশা রায়, সাফরিনা খাতুনরাও সফল ভবিষ্যতের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চায়। ওরা সকলেই নার্সিং পড়ুয়া। কলকাতার অদূরে সরকার অনুমোদিত ওদের ক্যাম্পাসের নাম ফলতা জেআইএস নার্সিং ইনস্টিটিউট।
বাংলার নারী শক্তি জেগে উঠছে। ওদের অদম্য মনের জোর দেখে সহজেই অনুমান করা যায় ওরা একেক জন বেগম রোকেয়া বা ভগিনী নিবেদিতার পরবর্তী প্রজন্ম। বাংলা একদিন সত্যি সত্যি বদলে যাবে বর্ণালী-নাসরিনাদের হাত ধরে।
কলকাতা শহরতলির অন্যতম ডায়মন্ড হারবার। এর মধ্যে ফলতা নামটি ঐতিহাসিকভাবে সবারই জানা। ১৭৫৬ সালে লর্ড ক্লাইভ ও সিরাজ-উদ-দৌলার দ্বন্দ্বের হাত ধরে ইতিহাসের পাতায় ফলতা নামটি পাকাপাকি স্থান করে নিয়েছে। ইতিহাস প্রসিদ্ধ সেই মাটিতে আরেক ইতিহাসের জন্ম দিচ্ছেন সমাজসেবি জাহির ইসলাম। তাঁর অদম্য প্রচেষ্টায় ফলতায় গড়ে উঠেছে জেআইএস নার্সিং ইনস্টিটিউট।
ফলতা গভঃ আইটিআই কলেজের ঠিক উল্টোদিকে মোট ১২ বিঘা জমির মধ্যে ৪ বিঘার ওপর গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক মডেলের ক্যাম্পাস। ক্লাসরুম, লাইব্রেরি, প্রশিক্ষণক্ষেত্র, কমনরুম, ক্যান্টিন সবেতেই আধুনিকতার ছোঁয়া। ছাত্রীদের জন্য ত্রিস্তর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ঢিলছোঁড়া দূরত্বে রয়েছে জাহির সাহেবের ১৫০ বেডের অত্যাধুনিক দি সহারারহাট নার্সিংহোম। দুর্লভ কিছু রোগের চিকিৎসার জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বিখ্যাত হয়ে উঠেছে এই চিকিৎসাকেন্দ্রটি। দূর দূরান্তের ক্রনিক পেসেন্টরা ভিড় করছেন এখানে। মহামারীর সময়ে সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কোভিড হাসপাতাল হিসাবে কাজ করে খ্যাতি অর্জনও করেছে তাঁর প্রতিষ্ঠান।
এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার জাহির সাহেবের সরল ব্যাখ্যা, জাতির বদল চাইলে সবার আগে মাতৃ সমাজের শিক্ষা ও স্বনির্ভর হওয়ার প্রয়োজন। এমন করে কি সবাই ভাবতে পারেন? জাহির সাহেব জবাব দেন, ‘এ কথা মাথায় রাখতে গিয়ে ব্যবসা করা যাচ্ছে না। দুস্থ থেকে অতি সাধারণ ঘরের রোগী বা পড়ুয়া তাঁদের দুরাবস্থার কথা জানালে সাহায্য ছাড়া মাথায় আর কিছু আসে না। ওরা জেনেছে, বিবেকবান ও হৃদয়বান জাহির স্যারকে দারিদ্রের কথা বলতে পারলে, তিনি কম খরচে কিছু একটা ব্যবস্থা করবেন। যা বর্তমান বাজার মূল্যের থেকে অনেকটা কম।’
ঠিক সে কারণেই পামেলা হালদার, অম্বিকা থাণ্ডার, শ্রবণী পুরকাইত, সাফরিনা খাতুন, জিনিয়া খাতুনরা দূর দূর থেকে ভর্তি হয়েছে এই কলেজে। ওরা জানায়, স্যারের মানবিক মন আমাদের স্বপ্ন পূরণের রসদ জুগিয়েছে। আমরা এখানে অত্যাধুনিক পরিকাঠামোসহ পড়াশোনার একটা মুক্ত পরিবেশ পেয়েছি।
এ ব্যাপারে জাহির সাহেবে জানাচ্ছেন, আধুনিক মানের ক্যাম্পাসের জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবটা আছে এখানে। একই সঙ্গে চারটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্র্যাক্টিক্যাল করার সুযোগ সব নার্সিং কলেজ দিতে পারে না। আমাদের লক্ষ্য যতটা না ব্যবসা তার থেকে বেশি বাংলার নারী সমাজকে স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়া। তিনি আরও জানান, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেয়েদের স্বনির্ভতার লক্ষ্যে অনেকগুলো প্রকল্প করেছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড ও সংখ্যালঘু ঋণ তার অন্যতম। আমার কলেজের সমস্ত মেয়ে সেই সুযোগ পাচ্ছে।
বলতে বলতে হঠাৎ থমকে গেলেন তিনি। তারপর বলে উঠলেন, ‘আল্লাহপাক সুযোগ দিয়েছেন। সমাজের জন্য কিছু না করলে তার তো হিসেব দিতে হবে।’