পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: অঙ্গ প্রতিস্থাপনে কার্যত মাইলস্টোন ছুঁলেন চিকিৎসকরা।দেশে প্রথম প্রতিস্থাপন হল হাত। ২০ জন চিকিৎসক, ১০ জন অ্যানাসথেসিস্ট ১৮ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে এই অসাধ্যসাধন করলেন।কেরলের একটি হাসপাতালে অমরেশ নামে এক যুবকের শরীরে সফল ভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে দুটি হাত। এমনটাই দাবি করেছেন চিকিৎসকরা।
২০১৭ সালে কেরলের যুবক অমরেশ গুরুতর ভাবে জখম হন। বিদ্যুতের তার সারাই করতে গিয়ে গুরুতর জখম হন তিনি। অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর ডান হাত কনুই থেকে এবং বাম হাত কাঁধ থেকে অস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে হয়। একইসঙ্গে মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয় দুই হাতের স্নায়ু ।
এরপর ওই যুবক হাত প্রতিস্থাপনের আবেদন জানান । কিন্তু বিগত ছয় বছরেও মেলেনি উপযুক্ত দাতা। হতাশ হয়ে পড়েছিলেন অমরেশ এবন্ত তার পরিবারের সদস্যরা। শেষ পর্যন্ত সম্প্রতি তিরুঅনন্তপুরমে একটি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান বিনোদ নামের এক ৫৪ বছর বয়সি প্রৌঢ়। মৃতের বাড়ির লোক তাঁর অঙ্গ দান করতে সম্মত হন। পশ্চিম এশিয়ায় কর্মরত বিনোদ, ৫৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তি কেরালার কোল্লাম জেলায় নিজের বাড়িতে ছুটি কাটাতে এসেছিলেন।তার মোটরসাইকেলের সঙ্গে একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। বিনোদ মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে তিরুবনন্তপুরমে প্রাণ হারান।
বিনোদের পরিবার তার মৃত্যুর পরে তার হাত সহ বিভিন্ন অঙ্গ দান করতে সম্মত হন , অমৃতা হাসপাতালের ডাক্তাররা অঙ্গটি সংগ্রহের জন্য তিরুবনন্তপুরমে উড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। প্লাস্টিক ও গঠনমূলক সার্জারির কেন্দ্রের প্রধান ডঃ সুব্রামানিয়াম আইয়ার, প্লাস্টিক সার্জেন অধ্যাপক ডঃ মোহিত শর্মা,সহ মোট ২০ জন সার্জন এবং১০ জন অ্যানেস্থেটিস্টের একটি দল এই ম্যারাথন সার্জারি করেন।
কেরলের অমৃতা হাসপাতালের চিকিৎসরা জানিয়েছেন এই ধরনের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা তাঁদের ছিলনা। ভারতে এটি প্রথম হাত প্রতিস্থাপনের ঘটনা। গোটা বিশ্বে মাত্র তৃতীয়।
ওই টিমের ডাক্তারবাবুদের কথায় এখন অমরেশ নিজের হাতে ভাত খেতে, দাঁত মাজার মত কাজ করতে পারবেন।কিন্তু প্রতিদিন তাঁকে পাঁচ ঘন্টা করে ফিজিওথেরাপি করতে হবে। কোন চোট না লাগে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। কোন রকম র্যাশ বা কিছু দেখা দিলেই চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
অমরেশের পরিবারের সদস্যরাও অত্যন্ত খুশি। অঙ্গদাতার পরিবারকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন তাঁরা। এই সাহসী সিদ্ধান্ত তাঁরা নিতে পেরেছেন বলেই অমরেশ আবারও নতুন জীবন ফিরে পেলেন। এই ধরনের সিদ্ধান্ত যত বেশি নেওয়া হবে তত বাড়বে অঙ্গ দানের সচেতনতা। অঙ্গ দান করা ব্যক্তিও বেঁচে থাকবেন আরও একজনের মধ্যে দিয়ে।