পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ শুক্রবার আলিপুরের সিবিআই এজলাসে পেশ করা হয়েছিল রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। এদিন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের আবেদনে মান্যতা দিল আলিপুর আদালত। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর অবধি সিবিআই হেফাজত হয়েছে পার্থের। ভুয়ো নিয়োগের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাই হেফাজতে চেয়ে এদিন আদালতে দাবি করলেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। এই মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে সিবিআই আদালতে দাবি করে যে, ‘ শিক্ষক নিয়োগে ভুয়ো নিয়োগের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী।’ আলিপুর আদালতে সওয়াল-জবাবে ধৃত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী বলেন, ‘প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে কেন আদলতে আনা হল? তা বোধগম্য নয়। পার্থকে গ্রেফতার করেছে ইডি। এখন সিবিআই তাঁকে হেফাজতে চাইছে। ওদের নিজেদের মধ্যে সমতা নেই।’
যখন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সিবিআই গ্রেফতার করেনি, তখন তারা কীভাবে তাঁকে হেফাজতে চাইতে পারে?’ এর প্রত্যুত্তরে সিবিআইয়ের আইনজীবী এজলাসে এদিন বলেন, ‘আমরা গ্রেফতার করে হেফাজতে চাইছি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। চারশোর বেশি সংখ্যক মানুষ ভুয়ো নিয়োগপত্র পেয়েছেন, যাঁরা অনেকেই পাশ করেননি বা পরীক্ষা দেননি। বেশিরভাগ রেকমেন্ডেশন লেটার ভুয়ো। পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন এর মাস্টারমাইন্ড। এই দুর্নীতি হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশে। অন্য অভিযুক্ত শান্তি প্রসাদ সিনহা, অশোক কুমার সাহা। তাঁদেরকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার গ্রেফতার হয়েছেন কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। তাই প্রধান অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। এতদিন তিনি ইডি হেফাজতে ছিলেন। মামলার তদন্তের স্বার্থে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সিবিআই-এর প্রয়োজন। তাই নিজেদের হেফাজতে চাইছি আমরা।’
এদিন পার্থের আইনজীবী এজলাসে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে বলেন, ‘ পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতারের পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে সিবিআই ও ইডি’র মধ্যে। এর আগেও তাঁকে ডাকা হয়েছে। প্রত্যেকবার তিনি গিয়েছেন, দেখা করেছেন। তিন বার ডাকা হয়েছিল তাঁকে। অভিযুক্ত প্রত্যেকবার সিবিআইকে সাহায্য করেছেন। গত ২৩ জুলাই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। কারণ ইডি’র চার্জশিট দিতে হত ৬০ দিনের মাথায়। ইডি সেটা দিতে পারত না। তাই সিবিআই ওই ৬০ দিন হওয়ার আগেই অ্যারেস্ট দেখিয়ে তাঁকে হেফাজতে চাইছে। এটা অর্থনৈতিক দুর্নীতির মামলা।’
দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শোনার পর সিবিআই এজলাসের বিচারক বলেন, ‘তদন্তকারী দল ভিন্ন। তাই তাদের প্রয়োজন ভিন্ন তদন্তের। সেটা তো হতেই পারে।’ এরপরই বিচারক ৫ দিনের সিবিআই হেফাজত এর নির্দেশ জারি করেন। পার্থর সঙ্গে সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে। এদিন নিজের জামিন চেয়ে আইনজীবীর পাশাপাশি নিজে সওয়াল করেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা বলার পাশাপাশি পার্থ তাঁর পারিবারিক গৌরবের কথাও তুলে ধরেন। আদালতকে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী এজলাসে বলেন, ‘আমার কাকা প্রবাদপ্রতিম সাহিত্যিক ছিলেন। আমার মা-বাবা দু’জনেই ছিলেন উচ্চশিক্ষিত। আমি নিজে এমবিএ, ডক্টরেট। দীর্ঘদিন একটি নামী সংস্থায় উঁচু পদে চাকরি করেছি। আমায় জামিন দেওয়া হোক।’ তবে পার্থের এই আবেদনে সায় দেয়নি আলিপুর আদালত।