পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: করোনা আবহের দাপট কিছুটা কমতে না কমতেই ফের ডেঙ্গু আতঙ্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যেই পুরসভা থেকে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থার মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেন কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল। উপসর্গ দেখা দেওয়ায় তার শারীরিক পরীক্ষা করা হয়।
শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাঁকে। বুধবার শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। কলকাতার ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে জ্বরে ভুগছিলেন আইপিএস বিনীত গোয়েল। প্রথমে বাড়ি থেকে কাজ করছিলেন তিনি। পরে ডেঙ্গি পরীক্ষা করানোর পর হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে এখন তার অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, ক্রমেই কলকাতায় দাপট বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু। গত এক সপ্তাহে শহরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। কলকাতায় এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা মোট ৭। যা নিয়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে কলকাতা পুরসভা। ডেঙ্গু পরিস্থিতি যাতে আয়ত্তের বাইরে না যায়, সে-বিষয়ে ইতিমধ্যেই সবক’টি জেলাকে সতর্ক করেছে নবান্ন। তবে তার পরেও কলকাতায় রোখা যায়নি ডেঙ্গু সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত। এ দিকে সামনেই পুজো, তারমধ্যে বৃষ্টি বিরাম দেয়নি। এই অবস্থায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে পুর প্রশাসন।
আগাম সতর্কতা হিসেবে পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের পুজোর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী, শারদোৎসব চলাকালীন ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার, ফিনান্স অফিসার, হেল্থ অফিসার এবং স্যানিটারি ইনস্পেক্টরদের কোনও ছুটি থাকবে না। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদেরও ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিককালে রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা একলাফে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। চিকিৎসার জন্য অনেককেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নজরদারি চালানোর উপর জোর দিচ্ছে রাজ্য সরকার। এর পাশাপাশি ডেঙ্গুর বাহক মশা নিয়ন্ত্রণের জন্যও বিভিন্ন পদক্ষেপ করছে রাজ্য। এই কাজ আগামী দিনেও এবং বিশেষ করে পুজোর সময়েও যাতে সমান তালে চলতে থাকে, সেই কারণেই পুজোর ছুটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মূলত কলকাতার ২৪টি ওয়ার্ড হয়ে উঠেছে ডেঙ্গুর হটস্পট। সেখানকার কয়েকটি নির্দিষ্ট এলাকায় ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্ত দেখা দিয়েছে। পুরসভা সূত্রে খবর, ১ জানুয়ারি থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওই এলাকাগুলিতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫১। এরপরেই পুরসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ওই এলাকাগুলিতে আলাদা করে অস্থায়ী ফিভার ক্যাম্প করা হবে। সেখানে অতিরিক্ত চিকিৎসক দিয়ে সাহায্য করবে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন এবং স্বাস্থ্য দফতর। পুরসভার সূত্রে খবর, বর্তমানে শহরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ এবং সংযুক্ত কলকাতায়। ৯ নম্বর বোরো এলাকায় সংক্রমণের গ্রাফ খানিকটা নিম্নমুখী হলেও ১০, ১১, ১২, ১৩ নম্বর বোরো অঞ্চলে অর্থাৎ টালিগঞ্জ, হরিদেবপুর, বাইপাস সংলগ্ন কসবা, মুকুন্দপুর, কালিকাপুর, গরফা, বেহালার খানিকটা অংশে ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ।
যা কার্যত নাগালের বাইরে, এমনটাই দাবি পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকদের। অন্যদিকে, উত্তর কলকাতায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ এতদিনে সবচেয়ে বেশি থাকলেও মঙ্গলবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে উত্তর কলকাতায়।
একদিকে যখন ডেঙ্গু সংক্রমণ রোধে হিমশিম খাচ্ছে পুর প্রশাসন, তখন আরও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘ডেঙ্গু থ্রি’ ভ্যারিয়েন্ট। যার মারণক্ষমতা অনেক বেশি। ইতিমধ্যে সিঙ্গাপুরে মিলেছে এই ভ্যারিয়েন্ট। কলকাতাতেও সেই ভ্যারিয়েন্ট কামড় বসিয়েছে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পুরসভার কর্তারা। যেহেতু ইতিমধ্যেই শহরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে একাধিকের।
সূত্রের খবর, স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের একটি রিপোর্ট উল্লেখ করে বলা হয়েছিল, রাজ্যে ডেঙ্গু ‘২.৭৩’ ভ্যারিয়েন্টের হদিশ মিলেছে। এরপরেই এর সত্যতা যাচাই করতে নাইসেডের সাহায্য নিতে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ‘ডেঙ্গু থ্রি’ ভ্যারিয়েন্টের খবর নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।