পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: আমি আশা করেছিলাম, আদালত এই ধরনের আববেদনগুলি না শুনে বরং তা খারিজ করে দেবে। এখন দেখা যাচ্ছে যে, এই ধরনের আরও মামলা আসবে এবং এটি বাবরি মসজিদের আইনি ইস্যুটির মতোই চলবে। জ্ঞানভাপী রায়ের কয়েক ঘণ্টা পরে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি ।
জেলা আদালতের বিচারপতি এ কে বিশ্বেশ সোমবার আদেশ দিয়েছেন যে, পাঁচ হিন্দু মহিলার একটি আবেদনের শুনানি হবে। এই মহিলারা মসজিদ প্রাঙ্গণে বছরব্যাপী আচার অনুষ্ঠানের অনুমতি চেয়েছিল বারাণসী জেলা আদালতে।
চলতি বছরের শুরুতে সুপ্রিম কোর্ট বিশেষভাবে মামলাটি হস্তান্তর করেছিল। জেলা আদালতের এই নির্দেশ প্রসঙ্গে ওয়াইসি বলেন, অনেকেই বলবে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের আগে আমাদের অবস্থান আলাদা ছিল। আমাদের পুরাতন অবস্থান ফিরিয়ে দেওয়া হোক। তা করতে গেলে ১৯৯১ সালের ধর্মীয় উপাসনালয় আইনের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। ১৯৯১ সালে আইনটি করা হয়েছিল, যাতে এই ধরনের সংঘাতের অবসান ঘটে। কিন্তু আজকের আদেশের পর মনে হচ্ছে এই ইস্যুতে আরও মামলা হবে। আমরা আশির দশকে ফিরে যাব । ফের এটি একটি অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করবে।
ওয়াইসি বলেন, বাবরি মসজিদ ইস্যুতে যে পথে আমরা চলেছি, এখন আমরা সেই পথেই যাচ্ছি। যখন বাবরি মসজিদের রায় দেওয়া হয়েছিল, আমি সবাইকে সতর্ক করে বলেছিলাম এটি দেশে সমস্যা তৈরি করবে। কারণ যুক্তি কিংবা আইনের ভিত্তিতে নয়, এই রায়টি বিশ্বাসের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছিল।
একটি বেসরকারি চ্যানেলকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, যদি বলা যায় আপনি যে চেয়ারের নীচে বসে আছেন, তার নীচে এক সময় মন্দির ছিল, তারপরই যদি সেখানে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়ে যায় তাহলে আপনার সংস্থার অস্তিত্বও থাকবে না। এটা একটা মারাত্মক প্রবণতা। গোটাটা হচ্ছে কেবল গেরুয়া রাজনীতির কথা মাথায় রেখে। সিভিল আইনের মোদ্দা কথা হল জমির মালিককে। জমির আসল কাগজ কার বা কাদের নামে। সম্পত্তি দীর্ঘদিন কার দখলে। সেসব কথা আজকাল শোনা যাচ্ছে না। ফলে প্রথমেই হুজগ তোলা হচ্ছে জমি খুঁড়ে দেখতে হবে নীচে কী আছে। তার ফল যা হওয়ার হচ্ছে তা সকলের কাছে স্পষ্ট। বাবরির সময়েও সেটা দেখা গিয়েছিল। যদি এইভাবে মাটি খুঁড়ে কিংবা ভিডিয়োগ্রাফি করে কোনও প্রতিষ্ঠানের প্রাচীন পরিচয় বের করা হয়, তাহলে ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল আইনের কোনও অর্থই থাকে না। বারাণসী জেলা আদালত সোমবার যা করেছে, তা উপাসনালয় আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
আদালতের এই সিদ্ধান্তের পরে ওয়াইসি বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি যখন বারাণসীতে কাশী বিশ্বনাথ করিডর উদ্বোধন করেছিলেন তখন প্লট নম্বর ৯৩ এবং ৯৪ বিনিময় হয়েছিল। বিনিময় তো মালিকের মাধ্যমে হয়। তাহলে কোন যুক্তিতে প্রধানমন্ত্রী তার বিনিময় করেছিলেন। ওয়াইসি আরও বলেন, বাবরির সময় সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে, বারাণসী জেলা আদালতের নির্দেশ তার বিপরীত। হায়দরাবাদের সাংসদ বলেন, তিনি আশা করছেন আঞ্জুমানে ইন্তেজামিয়া কমিটি দ্রুত এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে। তা না হলে ফের মাটি খোঁড়াখুঁড়ির রাজনীতি শুরু হয়ে যাবে। নামিয়ে দেওয়া হবে পুরাতত্ত্ব বিভাগকে। তারপরের কাহিনি সকলের জানা।