শিক্ষক হলেন জ্ঞানের আলো সত্য পথের যাত্রী,
তাদের করে অনুসরণ সকল ছাত্র-ছাত্রী……
ওবাইদুল্লা লস্কর,দক্ষিণ২৪ পরগণা: কবি সত্যেন রায়ের লেখা সেই কবিতাটা আজ এই শিক্ষক দিবসের বিশেষ দিনটাতে আরও একবার মনে করিয়ে দিল। আর আজ এই বিশেষ দিনেই শোনাবো এক শিক্ষকের অন্য ধরনের গল্প যিনি আজীবন বিনা পয়সায় পড়িয়ে গেছেন বহু ছাত্র-ছাত্রীকে। তিনি আর কেউ নন ডায়মন্ডহারবার হাইস্কুলের ফিজিক্যাল এডুকেশনের শিক্ষক দিলীপ বেরা। জন্মসূত্রে তিনি কুলপির নিশ্চিন্তপুর এলাকার বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে তিনি ডায়মন্ডহারবার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের একজন স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে শুরু করেন নিজের কর্মজীবন। শতবর্ষ প্রাচীন ডায়মন্ডহারবার হাই স্কুল থেকেই ১৯৮১ সালে প্রথম তার কর্মজীবন শুরু হয়। তখন তিনি ফিজিক্যাল এডুকেশনের শিক্ষক হিসেবে স্কুলে যোগদান করলেও ইতিহাসে দক্ষতা এবং মাস্টার ডিগ্রী থাকার কারণে আস্তে আস্তে স্কুলে ইতিহাসের শিক্ষক হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন দিলীপ বেরা। স্কুল জীবন শুরুর প্রথম থেকেই তার লক্ষ্য ছিল ছাত্র-ছাত্রীদের আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার।
আর তাই বহুবার অন্যান্য স্কুলে শিক্ষকতার সুযোগ আসলেও কোনদিন তিনি ডায়মন্ডহারবার হাইস্কুল ছেড়ে যাননি। এখনো সেই আগের মতই সাদামাটা জীবন যাপন করতেই ভালোবাসেন দিলীপ স্যার আর তার নিত্য সঙ্গী তার সাইকেল তাতে চাপেই তিনি এখনো পর্যন্ত কোনো ছাত্র-ছাত্রীর কোন অসুবিধার কথা শুনলেই পৌঁছে যান তাদের কাছে। দীর্ঘ ৬০ বছরের কর্মজীবনে এমন অনেক বহু ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে যারা স্যারের কাছে দিনের পর দিন বিনামূল্যে পড়াশোনা করেছেন। স্কুলের শুরুর প্রথম থেকেই ছাত্রদের খেলাধুলা শরীর চর্চা এইসব বিষয়ে স্যারের অধিক নজর থাকত। তার তত্ত্বাবধানে ডায়মন্ড হারবার হাই স্কুল সহ অন্যান্য স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা ন্যাশনাল পর্যন্ত খেলতে গেছেন। কর্মজীবনের থাকার সময় তিনি পরপর দু বছর রাজ্য বিদ্যালয়ে ক্রীড়া সংস্থার সদস্যও ছিলেন।
পাশাপাশি দীর্ঘদিন ডায়মন্ডহারবার মহকুমা বিদ্যালয় ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। আর সব ছাত্রের কাছেই ভালোবাসার আরেক নাম দিলীপ বেরা স্যার। আর অনেক ছাত্র-ছাত্রী তাদের সেই ফেলে আসা অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে। দীর্ঘ ৬০ বছরের কর্মজীবনে ২০১৭ সালে তিনি রিটায়ারমেন্ট করেন কিন্তু এখনো পর্যন্ত নিয়মিতই তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের বিনা পয়সায় পরিয়ে চলেছেন আর সেই বিষয়ে স্যারের কাছে জানতে চাওয়া হলেই আবেগপ্রবণ হয়ে অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তার আদর্শে আদর্শিত হয়ে অনেক ছাত্রই এখন অনেক বড় বড় জায়গায় পৌঁছেছে কিন্তু ভুলতে পারিনি স্যারকে আর তাই আজকের এই বিশেষ দিনটাতেও তারা ছুটে এসেছে স্যারের কাছে কেউ নিয়ে এসেছে উপহার আবার কেউবা মিষ্টি, তিনি আর কেউ নন দিলীপ বেরা। আর আজ শিক্ষক দিবসের এই বিশেষ দিনটাতেই আমরা কুর্নিশ জানাই সবার প্রিয় দিলীপ বেরা স্যারকে।