নিজস্ব প্রতিনিধি: মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ধর্মীয় বিদ্বেষ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে ধর্মের বিষ ছড়ানোর কাজটা সুকৌশলে করে চলেছে গেরুয়া শিবির। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি প্রদান উদযাপন অনুষ্ঠানে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে ফের একবার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেড রোডের মঞ্চে দুর্গাপুজোকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানোর পাশাপাশি তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। এই পৃথিবী একটাই দেশ। মানবতাই সব থেকে বড় শক্তি। তাই মানবতার সঙ্গে কোনও আপস নয়।’ সেই সঙ্গে সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে পুজোর আনন্দে মেতে ওঠার আর্জি জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ আজ থেকে পুজো শুরু হয়ে গেল। খুশিতে থাকুন। মন ভাল রাখুন। মানবিক থাকুন। হৃদয়কে উদার করুন।’ যদিও মুখ্যমন্ত্রীর কথার মর্মার্থ রাজ্যের বিরোধী দলের বাক-সর্বস্ব নেতারা উপলব্ধি করতে পারলেন কিনা, তা জানা নেই।
ক্যালেন্ডারের পাতা অনুযায়ী বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজোর এখনও মাসখানেক বাকি। কিন্তু এদিন থেকেই যেন কলকাতায় দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গেল। বাঙালির প্রাণের উৎসবকে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। আর সেই স্বীকৃতি উদযাপনে এদিন দুপুরে জোড়াসাঁকো থেকে রেড রোড পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করেছিল রাজ্য সরকার। ওই শোভাযাত্রায় সামিল হতে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃষ্টিস্নাত কল্লোলিনীর রাজপথে এদিন মিছিলের ভিড় প্রমাণ করেছে, সেই আহ্বান বৃথা যায়নি। শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন পুজো কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে সেলিব্রেটি, মন্ত্রী-জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে খুদে পড়ুয়ারা পা মেলালেন মিছিলে। তালপাতার পাখা থেকে রঙিন মুখোশ, ধামসা-মাদল থেকে শুরু করে ফানুস-আবির, সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে জোড়াসাঁকো থেকে শুরু হওয়া মিছিল শেষ হল রেড রোডে। মিছিলের সামনের সারিতেই ছিলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। মিছিল যে রাস্তা ধরে এগিয়ে চলেছিল, সেই রাস্তার দুই ধারে অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন ইতিহাসের সাক্ষী হতে।
মিছিল শেষে রেড রোডের অস্থায়ী মঞ্চে আয়োজন করা হয়েছিল বিশেষ অনুষ্ঠানের। ওই মঞ্চে ছিলেন ইউনেস্কোর দুই প্রতিনিধি এরিক ফল্ট ও মার্ক কার্টসি, দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর বিশেষ স্বীকৃতি পাওয়ার পিছনে যার অবদান রয়েছে সেই ইতিহাসবিদ তপতী গুহ ঠাকুরতা, রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী সহ রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকরা। মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে হাজির ছিলেন কলকাতার মহারাজ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। যাঁকে মমতার বিরুদ্ধে ভোট রাজনীতিতে মুখ করতে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব চেষ্টার কসুর রাখেননি। এদিন সৌরভকে যেমন দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করতে, তেমনই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের শীর্ষ কর্তাকে নিজের ছোট ভাই হিসেবে সম্ভাষণ করে মমতাও বলে ফেললেন, ‘সৌরভ আমার ছোট ভাইয়ের মতো। ওকে অত্যন্ত স্নেহ করি। ও সম সময়ে ব্যস্ত থাকে। সব কাজ ফেলে আমাদের আমন্ত্রণে এসেছে। এই অনুষ্ঠানে আসার জন্য ধন্যবাদ জানাই।’
কলকাতার দুর্গাপুজোর সঙ্গে শুধু যে বাঙালির আবেগ নয়, অর্থনীতিও অনেকটা জড়িত তা উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘আজ থেকেই দুর্গাপুজো শুরু হয়ে গেল। আমরা আইআইটি খড়গপুরকে দিয়ে একটা সমীক্ষা চালিয়েছিলাম। তাতে দেখা গিয়েছে, কলকাতা দুর্গাপুজোয় অন্তত ৪০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়। বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়। ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি আমাদের উদ্ধুব্ধ করবে। আজ শুধু কলকাতায় নয়, গোটা রাজ্য ধরে মিছিল হচ্ছে। সবাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই। ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ওরা নিজের চোখে দুর্গাপুজো দেখতে ফের কলকাতায় আসবেন। বেশ কয়েকটি ক্লাবে যাবেন।’ এদিন ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের পাশাপাশি ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমেডান ক্লাব ও সিএবি’র পক্ষ থেকেও ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের সংবর্ধিত করা হয়। স্মারক হিসেবে তাঁদের হাতে বিভিন্ন দুর্গামূর্তি তুলে দেওয়া হয়।