পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ‘শিব ঠাকুরের আপন দেশে, আইন কানুন সর্বনেশে’ – সুকুমার রায়ের ‘একুশে আইনে’ কবিতায় অনেক দিন আগেই এই কথা বলে গিয়েছিলেন তিনি। এবার আক্ষরিক অর্থেই তার প্রয়োগ দেখা গেল রণথম্ভোর জাতীয় উদ্যানে।যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হল একটি বাঘকে।শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্য।
প্রশাসনিক মহলে টি-১০৪ নামেই পরিচিতি তাঁর।অভিযোগ, একাধিক মানুষকে খুন করেছেন।স্বভাবতই উগ্র প্রকৃতির বাঘ টি-১০৪।সতীর্থ বাঘেদের সঙ্গেও ছিল না সদ্ভাব।মারপিটে জড়িয়ে থাকত সে।এমনকি তাঁর ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে অন্যত্র যেতে বাধ্য হয়েছে বেশ কয়েক বাঘ।এই সব বাঘগুলি নিজের বাসভূমি ছেড়ে আশ্রয় নিচ্ছিলেন অগভীর জঙ্গলে, জনবসতির কাছাকাছি এলাকায়।বাঘ সাধারণতই মানুষের জন্য বিপজ্জনক।ফলে রীতিমতো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছিলেন গ্রামের মানুষ। তাঁরা বারবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাচ্ছিলেন। অবশেষে টি-১০৪ বাঘকে বাগ মানাতে না পেরে তাই শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জঙ্গলের চিফ ওয়ার্ডেন।
একাধিক খুনের অপরাধে সোজা জেলের কালো কুঠরিতে অবস্থান হতে চলেছে টি-১০৪-এর।লোকচক্ষুর আড়ালে কাটাতে হবে তাঁর অবশিষ্ট জীবন। শুধু তাই নয়,একই সঙ্গে তাকে তার পরিচিত এলাকা থেকে সরিয়ে অন্যত্র নির্বাসন দেওয়ার অনুমতিও চাওয়া হয়েছে জাতীয় ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের কাছে।
বহুদিন ধরেই খুনে স্বভাবের বাঘটিকে অন্যত্রে সরানোর দাবি উঠছিল।এবার সেটাই বাস্তবায়িত হতে চলেছে।বাঘটিকে রাখা হবে দররা রেঞ্জের মুকুন্দ্রা হিল টাইগার রিজার্ভে।
সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বন মন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, তিনজন মানুষকে নৃশংস থাবায় খুনের পর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজস্থানের কারাউলি থেকে বাঘটিকে ধরা হয়। তাকে রণথম্বোরের ভিড় জঙ্গলে খাঁচার মধ্যে বন্দি রাখা হয়। তবে বন্দি হওয়ার পরও তার স্বভাব বদলায়নি।
উল্লেখ্য , পর্যটকদের আক্রমণ করার স্বভাবের জন্য এবং অন্য বাঘেদের ভয় দেখানোর অভ্যাসের জন্য বাঘটি সকলেরই অপছন্দের তালিকায়। তবে এই শাস্তির জেরে খুনে বাঘটিকে বাকিটা জীবন প্রাকৃতিক পরিবেশে স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, টি-১০৪ প্রথম নয়। এর আগে রাজস্থানে আরও একটি পুরুষ বাঘকে নির্বাসনের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। বাঘটির পরিচয় ছিল টি-২৪। এমনকি নিজের এলাকায় অনেকে তাঁকে ওস্তাদ নামেও জানত।
এমন শাস্তির উদাহরণ রয়েছে বাংলাতেও। বহু বছর আগে এরকমই এক শাস্তির সাক্ষী ছিল কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানা।স্বামী জিরাফের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায়,অনিচ্ছাকৃত ভাবে সপাটে লাথি মারে স্ত্রী জিরাফ।অনিচ্ছাকৃত এই খুনের শাস্তি পেতে হয় স্ত্রী জিরাফটিকে। কারও কথায় তা ছিল যাবজ্জীবন। কারও কথায় আজীবন নির্বাসন। এদিকে, টি-১০৪ এর ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে, তা নিয়ে বেশ কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাঘ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই ধরনের বাঘগুলি সাধারণত মিশুকে প্রকৃতির হয় না।নিজের প্রজাতির অন্য বাঘের সঙ্গে মিলমিশ থাকা এর স্বভাবে নেই। তাই এরা হিংস্র প্রকৃতির এবং একা থাকতেই পছন্দ করে। সেটা বুঝতে পারার পরই রণথম্ভোর থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বাঘটিকে।