মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিনঃ জুমার দিন বা শুক্রবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। এই দিনের মর্যাদা ও তাৎপর্য অনেক বেশি। ফজিলতের কারণে দিনটিকে ‘সাপ্তাহিক ঈদের দিন’ বলা হয়েছে।জুমার দিনের ফজিলত সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর রাসূল সা. বলেন, ‘জুমার দিন সপ্তাহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং তা আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৮৪)
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেন, ‘সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে হযরত আদম আ.-কে সৃষ্টি করা হয়াছে। এই দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এই দিনে তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৮৫৪)
জুমার আগে যে চার কাজ করবেন
শুক্রবারে বিশেষ কিছু সুন্নত রয়েছে। বিভিন্ন হাদিসে সেগুলো বর্ণিত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ধারাবাহিক কয়েকটি হল, গোসল করা, উত্তম পোশাক গায়ে দেওয়া, সুগন্ধি ব্যবহার করা ও মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শোনা।
আল্লাহর রাসূল সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করবে ও সুগন্ধি ব্যবহার করবে (যদি তার নিকট থাকে), তারপর জুমার নামাযে আসে এবং অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যায়, নির্ধারিত নামায আদায় করে, তারপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকে। তাহলে তার এই আমল পূর্ববর্তী জুমার দিন থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সমস্ত সগিরা গুনাহর জন্য কাফ্ফারা হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৩)
আগেভাগে জুমায় যাওয়ার ফজিলত
জুমার দিন আগেভাগে মসজিদে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ্তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাযের আযান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বোঝো।’ (সূরা জুমা, আয়াত : ৯)
এক হাদিসে আল্লাহ্র রাসূল সা. বলেন, ‘জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার আগে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো; যে একটি হৃষ্টপুষ্ট উট কুরবানি করে। এরপর যে আসে সে ওই ব্যক্তি; যে একটি গাভী কুরবানি করে। এরপর আগমনকারী ব্যক্তি; মুরগি দানকারীর ন্যায়। তারপর ইমাম যখন বের হন, তখন ফেরেশতাগণ তাদের লেখা বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনতে থাকেন। (বুখারী, হাদিস : ৯২৯)
সূরা কাহাফ তিলওয়াত যেন বাদ না যায়
সূরা কাহফ তিলওয়াত করা জুমার দিনের বিশেষ একটি দিক। হযরত আবু সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহফ পাঠ করবে, তার জন্য এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত নূর বর্ষিত হবে।’ (আমালুল ইয়াওমী ওয়াল লাইল, হাদিস : ৯৫২)
বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা জুমার দিনের ফজিলতপূর্ণ আরেক আমল। আল্লাহর রাসূল সা. বলেন, ‘দিনসমূহের মধ্যে জুমার দিনই সর্বোত্তম। এই দিনে হযরত আদম আ.-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে। এই দিনে সমস্ত সৃষ্টিকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর অধিক পরিমাণে দরূদ পাঠ করো। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার সম্মুখে পেশ করা হয়ে থাকে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৭)
জুমার দিন দোয়া করতে অবহেলা নয়
জুমার দিনের বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হচ্ছে দোয়া করা। হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে প্রিয় নবী সা. বলেন, ‘জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত এমন আছে যে, তখন কোনও মুসলমান আল্লাহর নিকট যে দোয়া করবে আল্লাহ্ তা কবুল করেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮)
আল্লাহ্তায়ালা আমাদের সুন্দর ও স্বার্থকভাবে জুমার দিন কাটানোর তাওফিক দান করুন। পবিত্র এই দিনের কল্যাণ, সাওয়াব ও ফজিলত দিয়ে আমাদের ভূষিত করুন।