পুবের কলম প্রতিবেদক: দীর্ঘদিন থেকেই রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা ছিল আলিপুর জেলে তৈরি হবে ‘ইন্ডিপেনডেন্স মিউজিয়াম’। এখন সেই প্রায় শেষ পর্যায়ে। কাজ শেষ হওয়ায় দ্রুত সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে, এই আলিপুর ইন্ডিপেনডেন্স মিউজিয়াম। আর শেষ মুহূর্তের কাজ খতিয়ে দেখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। রাজ্যের নগরায়ণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম নবনির্মিত মিউজিয়াম ঘুরিয়ে দেখান মমতা বন্দোপাধ্যায়কে। ফিরহাদ হাকিম মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, হেরিটেজ সাইট অক্ষুণ্ণ রেখেই তৈরি হয়েছে এই মিউজিয়াম।
উল্লেখ্য, ১৯০৬ সালে তৈরি হওয়া ২১ ফুট পাঁচিল ঘেরা আদিগঙ্গার পাড়ের লাল রঙের বাড়িটি অনেক ইতিহাসের সাক্ষী। সেখানে ব্রিটিশ জমানায় সময় কেটেছিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু,, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, জওহরলাল নেহরু, বিধানচন্দ্র রায়দের। সুভাষচন্দ্র বসু, চিত্তরঞ্জন দাসদের ব্যবহৃত কুঠুরি ‘হেরিটেজ সাইট’ হিসাবে চিহ্নিত রয়েছে।
ঐতিহাসিক আলিপুর জেলের অন্দরে রয়েছে নেহরু ভবন। রয়েছে দোতলার নেতাজি ভবন। আর ভবনের সঙ্গেই রয়েছে চিত্তরঞ্জন দাশ, বিধানচন্দ্র রায়ের ব্যবহৃত কুঠুরি। ওই কুঠুরিগুলির সামনে নেতাজি, দেশবন্ধু, যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের মূর্তি নামের ফলক-সহ বসেছে। আলিপুর জেলের ফাঁসিকাষ্ঠেই গলা দিয়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী অনন্তহরি মিত্র। সেখানে প্রমোদরঞ্জন চৌধুরীরও ফাঁসি হয়। এখানেই ব্রিটিশ সরকার ফাঁসি দেয় দীনেশ গুপ্তকে। সই সমস্ত জায়গাগুলি সাধারণ মানুষ ঘুরে দেখতে পারবেন।
দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন স্বাধীনতা সংগ্রামী রামকৃষ্ণ বিশ্বাস, দীনেশ মজুমদারেরও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় এখানে। ফাঁসি মঞ্চ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ব্যবহৃত কুঠুরিগুলি হেরিটেজ সাইট হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।
রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই এই মিউজিয়াম সম্পর্কে জানিয়েছেন। বেশ কয়েক বছর আগেই আলিপুর জেল থেকে বন্দিদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বারুইপুর সংশোধনাগারে। বেশ কয়েক বছর আলিপুর জেল বিল্ডিং থেকে প্রশাসনিক কাজ চললেও বাকি কাজ বন্ধ ছিল।
ঐতিহাসিক এই জায়গায় মানুষ যাতে এসে ইতিহাসের ছোঁয়া পান, সেই কাজ অবশেষে শুরু হল। প্রধান ফটকের মাথায় বসানো হয়েছে ইন্ডিপেনডেন্সমিউজিয়ামের বোর্ড। এ ছাড়া পাশের একাংশেও সেই পরিচয় তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। জেলের ভিতরের অংশেও চলছে নানান মাপজোক। চলছে সংস্কারের কাজ। হেরিটেজ সাইট অক্ষুণ্ণ রেখেই এই কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
তবে এই প্রকল্পে জুড়ে যাবে আরও বেশ কিছু জায়গা। তার মধ্যে বিপরীত দিকে থাকা জেলের প্রেসের অংশটিও থাকবে বলে সূত্রের খবর। রাজ্যে একাধিক মিউজিয়াম থাকলেও এই প্রথম কোনও মিউজিয়াম তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নানান ইতিহাস বর্ণিত হবে। আগামী প্রজন্ম নতুনভাবে জানতে পারবে, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস।