ফরিদাবাদ, ২৮ জুলাই : ঢাক ও ঢোলের আওয়াজে দুলে উঠছিল খোরি গ্রামের পার্শ্ববর্তী পাঁচতারা হোটেল। সেখানে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। আর সেই সময় খোরি গ্রামের ১০ হাজার বাড়ি ভেঙে মাটিতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল। গ্রামবাসীদের আর্ত চিৎকার চাপা পড়ে গিয়েছিল ওই বাদ্যযন্ত্রের উৎসবমুখর আওয়াজের তলায়। ইতিমধ্যে ৫০ জনেরও বেশি গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করে স্থানীয় থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নিজেদের বাড়িঘর নির্দয়ভাবে যখন ভাঙা হচ্ছিল তখন তারা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিল। এই হল তাদের অপরাধ। ধ্বংসযজ্ঞের পরদিন অর্থাৎ ১৫ জুলাই বহু স্থানীয় সাংবাদিককে অকুস্থলে যেতে দেওয়া হয়নি। পরিবর্তে সেই হোটেলের একটি তলায় তাঁদের আটকে রাখা হয়। মজার বিষয় হল, ‘আইনের শাসনের আড়ালে জমিদখলকারীরা লুকিয়ে থাকতে পারে না এবং ন্যায়ের দাবি তুলতে পারে না’ বলে সুপ্রিম কোর্ট ফরিদাবাদ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনকে ভূমি অধিগ্রহণের আদেশ দিয়েছিল যে আরাবল্লী অঞ্চলে, সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে ওই হোটেল, বহু ফার্ম হাউজ, একটি আশ্রম ও মদের দোকান।
যখন তার বাড়ি ভাঙা হচ্ছে তখন ১৮ বছরের স্নাতক স্তরের পড়ুয়া প্রিয়াংশু কনোজিয়া দিল্লিতে বসে পেপার লিখছেন। তিনি জানান,”বাড়ি ফিরে দেখলাম, আমার বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে।” এরপর ক্ষুব্ধ ও অশ্রুসজল চোখে প্রিয়াংশু বলেন,”যদি তারা আইনের খেয়াল রাখে তাহলে তাদের বলুন এই এলাকার হোটেল ও আশ্রম ভেঙে কাজ শুরু করতে। কিন্তু না, তারা প্রতিরোধহীন ও দুর্বলদেরই বাড়ি ভাঙবে।” প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে খোরি গ্রামের মানুষরা দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছেন। ভয় ছিল, করোনাজনিত অতিমারির মধ্যে তারা গৃহহীন হয়ে পড়বে। তারা জানান, এই এলাকায় দশকের পর দশক ধরে বাস করে আসছেন তারা। খোরি গ্রামে ১ লক্ষেরও বেশি লোকের বাস। মূলত দিনমজুর ও শ্রমজীবীরা থাকেন এখানে। এদের অধিকাংশই মুসলিম ও খ্রিস্টান। যাইহোক, ২৩ বছরের বর্ষা কুমারী জানান, সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়াররাও তাদের বাঁচাতে আসেনি। তার সমস্ত বই, খাতা ধ্বংসস্তূপের তলায় এখন। রাষ্ট্রসংঘের বিশেষজ্ঞদল ভারতীয় কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছিল এই উচ্ছেদ বাতিল করতে। কিন্তু তাঁদের কথাও শোনা হয়নি।