শুভজিৎ দেবনাথঃ বৃষ্টি ভেজা রাত, নিঝুম পরিবেশ।ঘড়ির কাটায় তখন দুটা ছুঁই ছুঁই।বেশ কয়েকদিনের তীব্র দাবদাহের পর দু-দিন ধরে চলা রাতের এই বৃষ্টি মানেই যেনো স্বস্তির ঘুম ,সেই সময় হটাৎ করে জানালায় ধাক্কা! কেঁপে উঠল বিছানা। ঘুমের ঘোরে প্রথমে মনে করেন হয়তো আকাশে মেঘের ডাক।ওপাশ হয়ে শুতেই ফের কেঁপে উঠলো পুরো বাড়ি। আতঙ্কে চুপটি করে শুয়ে থাকলেও মুহূর্তের মধ্যেই যেনো হুড়মুড়িয়ে বিছানায় খসে পড়তে থাকে একেরপর এক দেওয়ালের ইট।
যেখানে দুয়ারে ২৫ থেকে ৩০ টি জংলি হাতির পাল। ঘরে শুয়ে ছিলেন তিন মাসের সন্তান সহ বুড়ি ওঁরাও। হাতির উপস্থিতি টের পেয়ে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়েই দেখেন শাবক সহ মূর্তিমান প্রায় ত্রিশটি বুনো হাতি। মুহূর্তে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তারপর তার কিছু মনে নেই।
এরপর বাড়ির অন্য ঘরে থাকা পরিবারের সদস্যরা বুড়িকে উদ্ধার করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায়।এটাই আশ্চর্যের যে চোখের সামনে একজনপড়ে থাকতে দেখেও তাকে ছুঁয়েও দেখেনি বুনো হাতির পাল। একেই বলে রাখে আল্লাহ্ মারে কে?
জংলী হাতির পালের হানায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়। খাবারের সন্ধানে জঙ্গল থেকে লোকালয়ে বুনো হাতির হানা যেনো নিত্য নৈমিত্তিকার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি পাকা বাড়ি। প্রাণে বাঁচলেন ঘরের ভেতর থাকা পরিবারের লোকজন।
শনিবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বানারহাটের সাঁকোয়াঝোরা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের কালুয়া কলোনি এলাকায়। জানাজায়, অন্যান্য দিনের মতোই রাতের খাওয়া-দাওয়া সেরে তিন মাসের কোলের সন্তানকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিল কালুয়া কলোনির বাসিদা বুড়ি ওরাও। এরপর গভীর রাতে আচমকাই মোরাঘাট জঙ্গল থেকে এক পাল পুরো হাতি এসে দেওয়ালের মধ্যে ধাক্কা মেরে ভেঙে দেয় তার ঘরের দেওয়াল। বিছানার মধ্যে খসে পড়ে দেওয়ালের ইট। সেই সময় সন্তানকে নিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন তিনি। পরিস্থিতি টের পেয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে হাতির পাল দেখার পরই তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এসে তাকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যায়।এরপর চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলে পরে হাতির দলটি ফের জঙ্গলের দিকে চলে যায়।
এছাড়া ঐ এলাকায় আরো দুটি বাড়িতে হাতির দলটি হামলা চালিয়ে টিনের বেড়া ভেঙে দিয়ে বেশ কিছু কলা বাগান ও সুপারি গাছ নষ্ট করে দেয় বলেই খবর।
খবর পেয়ে সকালে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি পরিদর্শন করে পাশে থাকার আশ্বাস দেন এলাকার পঞ্চায়েত লিনা তামাং লামা। ক্ষতিপূরণের জন্য বনদপ্তরের কাছে আবেদন জানাবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
মোরাঘাট রেঞ্জের সূত্রের খবর, কালুয়া কলোনিতে হাতির হামলার কোন খবর এখনো পর্যন্ত তাদের কাছে এসে পৌঁছয়নি। ক্ষতিগ্রস্তরা যদি পোনা দপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করে তাহলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যাবস্থা করা হবে।