শুভজিৎ দেবনাথ, বানারহাট: হাতি তাড়ানো সহ বন্যপ্রাণী মোকাবেলায় ইতিমধ্যে বনদফতরের ওয়াইল্ড লাইফ ডিভিশনের গাড়ির ডিজেল , বাজি পটকা সহ অন্যান্য বেশকিছু সামগ্রীতে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার মাশুল দিতে হচ্ছে জঙ্গল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের বলে অভিযোগ।
শনিবার এক রাতে যমুনা প্রধান নামে এক মহিলার বাড়িতে ৩ বার হামলা চালালো বুনো হাতির দল। একইসঙ্গে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় তান্ডব চালিয়ে মোট ৮ টি বাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে দিলো বুনো হাতি। ঘটনায় আতঙ্কিত ডুয়ার্সের বানারহাট ব্লকের সাকোয়া ঝোড়া ১ নং গ্রামপঞ্চায়েতের বাসিন্দারা। ক্ষতি পুরনের দাবী জানিয়েছেন তারা।এক রাতে একই বাড়িতে তিন তিন বার জংলী হাতির হামলা।
প্রাণ বাঁচাতে কেউ পালালো ভাঙ্গা জানালা দিয়ে কেউ আবার ঘরেই আটকে থাকলো।হাতির হানায় নষ্ট হয়ে গেছে ঘরে মজুত করে রাখা খাদ্য সামগ্রী থেকে শুরু করে রান্নার হাড়ি- পাতিল সহ আসবাবপত্র। সকাল থেকে বেলা গড়িয়ে গেলেও এখনও না খেয়ে রয়েছেন তারা।শনিবার রাতে হাতির হানায় বানারহাটের সাঁকোয়াঝোরা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত নেপালি বস্তি এলাকায় ২ টি বাড়ি ভাঙে এবং গয়েরকাটা চা বাগানের চারু লাইনের ৬ টি বাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ।
জানা গেছে শনিবার রাত আটটা নাগাদ সোনাখালী ও মোরাঘাট জঙ্গল থেকে ১২-১৪ টি জংলী হাতির একটি দল ঢুকে পড়ে নেপালি বস্তি এলাকার যমুনা প্রধানের বাড়িতে।ভেঙে দেয় রান্না ঘর।চিতকার চেঁচামেচি শুরু করলে তেরে আসে শোবার ঘরের দিকে। আতঙ্কে পরিবারের লোকজন জাংলা দিয়ে পালিয়ে যান। আশ্রয় নেয় পাশের বাড়িতে। দু- ঘণ্টা খানেক বাদে ফের হাতির দলটি যমুনা দেবীর বাড়িতে এসে রান্নাঘর ও শোবার ঘরের জানলা ভেঙ্গে দিয়ে ঘরে মজুদ করে রাখা সমস্ত খাদ্য সামগ্রী সাবার করে দেয়। এরপর স্থানীয়রা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলে হাতির দলটি জঙ্গলের দিকে গেলেও কিছুক্ষণ পর খাবারের লোভে আবারও এসে ঘরের দেওয়াল ভেঙে ঘরে মজুদ করে রাখা চাল ডাল আটা থেকে শুরু করে সমস্ত খাদ্য সামগ্রী খেয়ে ঘরের হাড়ি পাতিল ভেঙ্গে দেয়।
যমুনা দেবী জানান, ‘ গতকাল রাত ৯ টার দিকে ১০-১৫ টি হাতির একটি দল আমার বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তখন আমরা ঘুমাচ্ছিলাম। কোনরকমে টের পেয়ে একটি ভাঙা জানলা দিয়ে স্বামী ও পুত্রবধু নিয়ে পালিয়ে বাঁচি। ৩ বার আমার বাড়িতে হাতির দল টি হামলা চালিয়ে সবকিছু শেষ করে দিয়েছে , এখন কি করবো ভেবে উঠতে পারছি না। ’ অন্যদিকে গয়েরকাটা চা বাগানে চারু লাইনে হাতির একটি দল হানা দিয়ে ৬ টি শ্রমিক আবাস ভেঙে ফেলে।
স্থানীয় বাসিন্দা মায়াকুমারী থাপা জানান, ‘ হাতির হানায় নেপালিবস্তির বাসিন্দারা দেশেহারা হয়ে রয়েছেন। বনকর্মীদের ফোন করা হয়ে তারা সময় মত ঘটনাস্থলে আসেন না। অন্যদিকে বুনো হাতির হানা অব্যাহত রয়েছে গয়েরকাটা চা – বাগানের শ্রমিক মহল্লায়। শনিবার রাত দেড়টা নাগাদ চারু লাইনের হানা দেয় ১২-১৪ টি হাতির একটি পাল। ঘুড়িয়ে দেয় ৬ টি শ্রমিক আবাস। তছনছ করে দেয় কলা বাগান।
পরিবেশ প্রেমী সংগঠন স্পোর এর সম্পাদক শ্যামা প্রসাদ পান্ডে বলেন বনদফতর গাড়ির জ্বালানি সহ অন্যান্য কিছুতে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ায় প্রচন্ড সমস্যায় পড়েছে বনকর্মীরা। কোনো যায়গা থেকে লোকালয়ে হাতি বা অন্য কোনও বন্যপ্রাণী ঢোকার খবর আসলে সমস্যায় পড়ে যাচ্ছেন বনকর্মীরা। কারন গাড়ির জন্য যেই সামান্য পরিমান জ্বালানি বরাদ্দ করা হচ্ছে তা দিয়ে ভালোমতো জঙ্গলে পাহাড়া দেওয়াই সম্ভব হচ্ছেনা।
ফলে গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন যায়গায় যেতে সমস্যা হচ্ছে। যার ফলে অনেকসময় স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে বনকর্মীদের। দপ্তরের উচিৎ অবিলম্বে বিষয়টি খতিয়ে দেখার। স্থানীয় বাসিন্দা এবং পরিবেশ প্রেমী সংগঠনের অভিযোগ নিয়ে আমরা অনারারি ওয়াইড লাইফ ওয়ার্ডেন সীমা চৌধুরীর সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করলে হাতির হানা সংক্রান্ত বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।
একইসঙ্গে পরিবেশ প্রেমী সংগঠনের বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করলে এই বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।ঘটনা প্রসঙ্গে,জলপাইগুড়ি বন্যপ্রান বিভাগের ডি এফ ও অংশু যাদব বলেন, ‘ বনকর্মীরা তাদের সাধ্যের মধ্যে প্রত্যকে জায়গায় গিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করে। কয়েকটি জায়গায় একসাথে হাতির হানার ঘটনা ঘটলে সমস্যার সৃষ্টি হয়। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলিতে নজর রাখার চেষ্টা করবে বন্যপ্রাণ দফতর। ’