অর্পিতা লাহিড়ীঃ জেল শব্দটি পাল্টে এখন সংশোধনাগার। দন্ডিত দের এখন সংশোধনাগারের আবাসিক বলেই উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ওই লৌহকপাটের আড়ালে যারা থাকেন তাদের কি এই তথা কথিত সমাজব্যবস্থা সমাদরে ফিরিয়ে নেয়। কোথাও যেন থেকে যায় “ জেল ফেরত কয়েদি” এই ছাপ্পাটা।
সংশোধনাগারের আবাসিকদের নিয়ে একটু অন্যরকম ভেবেছিলেন এই শহর কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সেই ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় বিয়ন্ড দ্য বারস। শহরের মোট চারটি কারেকসনাল হোমের আবসিকদের আগ্রহ অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়। আঁকা, যোগা, জুটের কাজ এমনকি প্রাথমিক হ্যোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পর্যন্ত।
২০১৬ সালে জুটের কাজ শিখতে শুরু করেন তিন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আবাসিক মইদুল মোল্লা, মুখলেশুর রহমান এবং ইন্দ্রজিত পাল।আজ এই সাজাপ্রাপ্তরা প্লাস্টিক বর্জন করে জুটের সামগ্রী ব্যবহারের বার্তা দিচ্ছেন। তাঁদের হস্তশিল্পের প্রদর্শনী হচ্ছে দেশে-বিদেশে।
এদের মধ্যে ইন্দ্রজিত দমদম সংশোধনাগারে আছেন ১১ বছর ধরে, ২০১৪ সাল থেকে দমদম কারেকশনাল হোমে আছেন মুখুলেশুর, মইদুলও সাজা খাটছেন কমবেশি ৯বছর। জীবনের কোন একটা অসতর্ক মুহুর্ত আজ তাদের
লৌহকপাটের অন্দরমহলে এনে ফেলেছে।
তবে এই অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তরণের শুরু ২০১৬ সাল থেকে। তিনজনেই শিখতে শুরু করেন জুটের কাজ। আজ এই তিনজন সাজাপ্রাপ্তর কাজই দেশ-বিদেশে প্রশংসিত। এর সংশোধনাগারেও এঁদের আচার আচরণ ছিল অত্যন্ত মার্জিত।
করোনা মহামারীর থাবা জনজীবনের পাশাপাশি সংশোধনাগারেও হানা দেয়। সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে প্যারোলে মুক্তি পান মইদুল মোল্লা, মুখলেশুর রহমান এবং ইন্দ্রজিত পাল। দেড় বছরের প্যারোল শেষশুক্রবারেই দমদম সংশোধনাগারে ফিরে গিয়েছেন মইদুল এবং মুখলেশুর। ইন্দ্রজিতেরও যেকোন সময়ে নির্দেশ আসবে দমদম সংশোধনাগারে ফিরে যাওয়ার ।
কিন্তু আজ আর তাঁদের কোন আক্ষেপ নেই। তার বুঝেছেন “ আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে” বৃহস্পতিবার কলকাতা প্রেসক্লাবে এই তিনজন কে একটি সাংবাদিক সন্মেলনের আয়োজন করেন ওই স্বেছাসেবী সংস্থা। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন পুলিশ কর্তা সুজয় চন্দ সহ অন্যান্যরা।
মইদুল , মুখুলেশুর এবং ইন্দ্রজিত এই তিনজনেই ব লেন আজ আর কোন আক্ষেপ নেই, তাঁরা জীবনের মানে খুঁজে পেয়েছেন। রত্নাকর থেকে বাল্মীকির পথে উত্তরণের হয়ত এটাই শুরু।
ছবিঃ সন্দীপ সাহা