কৌশিক সালুই, বীরভূম: অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প ডেউচা পাঁচামি কয়লা শিল্পাঞ্চলের কাজ। বৃহস্পতিবার প্রকল্প এলাকার কেন্দ্র পাহাড়ি গ্রামে কয়লার স্থিতি জানার জন্য কূপ খনন শুরু হল। এই শুভ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসন ও পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকেরা। এদিনের এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে এলাকায় উৎসবের চেহারা নেয়।ডেউচা পাঁচ আমি প্রস্তাবিত কয়লা শিল্পাঞ্চলের জমির বিনিময়ে রাজ্য পুলিশে চাকরি দেওয়ার কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া আগেই শুরু হয়েছে।
ইতিমধ্যেই ২৬০ জন ব্যারাকপুরে স্বামী বিবেকানন্দ রাজ্য পুলিশ অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এছাড়াও আরও ৭০০ জন চাকরি প্রার্থীকে খুব দ্রুত পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের নিয়োগ করার প্রক্রিয়া চলছে। আর তার মধ্যেই এদিন খনি বাস্তবায়িত হওয়ার কাজ শুরু হয়ে গেল। ডেউচা পাচামি প্রস্তাবিত কয়লা শিল্পাঞ্চলের প্রথম পর্যায়ের দেওয়ানগঞ্জ হরিণসীঙ্গা ব্লকে কয়লার বর্তমান স্থিতি জানার জন্য কুয়ো খননের কাজ শুরু হল। কেন্দ্র পাহাড়ি গ্রামের সরকারি জমিতে এদিন জেলা প্রশাসন ও পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের উপস্থিতিতে কাজ শুরু হয়। কয়লা উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু হতেই এলাকায় কার্যত উৎসবের চেহারা নেয়। প্রথম পর্যায়ের ব্লকের মধ্যে ১৪ টি স্থানে এই ধরনের পরীক্ষা করা হবে। যা সিংহভাগ সরকারি জমিতে। কেন্দ্র সরকারের এক সংস্থা সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। যদিও এই কয়লা প্রকল্প শুরু করার পথ মসৃণ ছিল না। রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলসহ কিছু অতিবাম সংগঠন এই প্রকল্পের প্রথম থেকে বিরোধিতা করতে শুরু করেছিল। যদিও সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা সেই প্ররোচনায় পা না দিয়ে প্রকল্প করার জন্য জমি বিনিময় চাকরির জন্য আবেদন করতে শুরু করে। এখনো পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার সেই আবেদন জমা পড়েছে। তার মধ্য থেকেই চাকরি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।
পাশাপাশি জমি তাদের কাছ থেকে জমি রেজিস্ট্রি করে তার মূল্যের চেক দেওয়ার কাজও চলছে দ্রুত গতিতে। এখনো পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জনের কাছ থেকে জমি কেনা হয়েছে। প্রসঙ্গত, উল্লেখ্য সিপিআইএমএল সংগঠনের প্রত্যক্ষ মদতে এলাকায় কয়লা খনি শিল্পের বিরোধিতার জন্য প্রকৃতি বাঁচাও মহাসভা সংগঠন তৈরি হয় সেখানে। প্রথমদিকে কয়েক হাজার মানুষ যোগ দিলেও এখন সেটা ১০০-এর নিচে এসে ঠেকেছে। যদিও তাদের সিংহভাগ সংশ্লিষ্ট প্রকল্প এলাকার বাসিন্দা নয় বলে স্থানীয়দের দাবি। এদিন কেন্দ্র পাহাড়ি গ্রামে ওই সংগঠনের বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচি থাকলেও লোকবল বেশি না থাকাই কার্যত রনে ভঙ্গ দিতে বাধ্য হন তারা। বাধ্য হয়ে বারোমেসিয়া গ্রামে গিয়ে মাত্র গুটিকতক লোকজনকে নিয়ে ধরনা শুরু করে।
এদিন বিক্ষোভ দেখানোর জন্য মহাসভার নেতারা স্থানীয় পাথর শিল্পাঞ্চলে কাজে যোগ না দেওয়ার জন্য স্থানীয়দের আহ্বান জানান ঢেরা পিটিয়ে। যদিও সেই বিরোধিতা করার আহবানে প্রকল্প এলাকার লোকজন কেউই সাড়া দেননি বলে দাবি স্থানীয়দের। বীরভূম জেলা আদিবাসী উন্নয়ন গাওতার নেতা রবিন সরেন বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দারা চাইছেন তাই এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। যারা বিরোধিতা করছেন তারা প্রকল্প এলাকায় কেউ নন। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে স্থানীয়রা কয়লা শিল্পের পক্ষে আছে”।
মহম্মদ বাজার ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি তথা জেলার আদিবাসী নেতা সুনীল সরেন বলেন, “রাজ্যের মানবিক মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মসূচিতে স্থানীয় আদিবাসী সহ অন্যান্য মানুষ জন শামিল হয়েছেন। এলাকার সমস্ত মানুষ জন প্রস্তাবিত কয়লার শিল্পের পক্ষে”। বীরভূম জেলা শাসক বিধান রায় বলেন, ‘উৎসবের মেজাজে এলাকাবাসীদের ইচ্ছাতে এদিন থেকে ডেউচা পাঁচামি প্রস্তাবিত কয়লা শিল্পাঞ্চল এলাকায় কয়লার বর্তমান স্থিতি জানতে কূপ খননের কাজ শুরু হল। কুড়ি বর্গ মিটার জায়গাতে এই খননের কাজ হচ্ছে। মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সি এম পি ডি আই এল সংস্থা এদিন এ কাজ শুরু করেছে। এখনও পর্যন্ত যারা বিরোধিতা করছেন তাদের সঙ্গে সঙ্গে আমরা আলোচনা করতে আগ্রহী”।