পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ মধ্যবিত্তের অস্বস্তি বাড়িয়ে ফের বাড়ল রান্নার গ্যাসের দাম। গৃহস্থের হেঁশেলে কোপ পড়লো আবারও। বুধবার ভর্তুকিহীন ১৪.২ কেজি ওজনের রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ৫০ টাকা বৃদ্ধি করল কেন্দ্রীয় সরকার। নতুন দাম অনুযায়ী এখন কলকাতায় গ্যাসের দাম দাঁড়াল ১০৭৯, দিল্লিতে ১০৫৩, টাকা, মুম্বাইতে ১০৫২ টাকা এবং চেন্নাইতে ১০৬৮টাকা ।
রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের কথায় ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার আগে দেশবাসীকে আচ্ছে দিনের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, মোদি শাসনকালের দুটি দফার মধ্যেই আচ্ছে দিন এখন দেশবাসীর কাছে চরম দুঃস্বপ্নে পরিনত হয়েছে।
একটা সময় ছিল যখন ইউপিএ শাসন ক্ষমতায় ছিল, সেই সময় এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়লে গেরুয়া শিবিরের প্রতিনিধিরা রাস্তায় ধর্নায় বসে যেতেন।পুরো ছবিটা বদলে গেল ২০১৪ সালে এনডিএ সরকার ক্ষমতায় আসার পর। এখন গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়ানোটা বিজেপি সরকারের রুটিন কাজে পরিনত হয়েছে। যার ফলশ্রুতি এক বছরে আট বার গ্যাসের দাম বাড়া।
ক্ষিপ্ত আমআদমির কথায় পেটের আগুন হিন্দু- মুসলিম সবাইকে নেভাতে হয়। যেহারে লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে তাতে হয়ত কলের জলে পেট ভরানোটাই দেশবাসীর ভবিতব্য।
এমনিতেই মুদ্রাস্ফীতির জেরে নাভিশ্বাস উঠছে মধ্যবিত্তের। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো যাচ্ছেনা কোনমতেই। এরমধ্যেই বিগত দুটি বছরে করোনা অতিমারীর প্রভাব পড়েছে আর্থ- সামাজিক ব্যবস্থাতেও। এর মধ্যে মাত্র দুটি মাসের মধ্যে রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ল মোট ১০৩ টাকা।
এই নিয়ে দু মাসে মোট তিনবার দাম বাড়ল রান্নার গ্যাসের। এর আগে ৭ মে ৫০ টাকা রান্নার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছিল কেন্দ্র। তার পর ১৯ মে আবারও দাম বাড়ানো হয়েছিল।বুধবার ১৪ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের পাশাপাশি , ৫ কেজি ওজনের ছোট সিলিন্ডারের দামও বাড়ানো হয়েছে ১৮ টাকা করে। তবে রান্নার গ্যাসের দাম বাড়লেও বাণিজ্যিক গ্যাসের দাম কমেছে। ১৯ কেজির বাণিজ্যিক গ্যাসের সিলিন্ডার পিছু সাড়ে আট টাকা করে কমানো হয়েছে দাম।
যদিও কেন্দ্রের সাফাই ভ্যাট এবং পরিবহন খরচের ওপর ওপর নির্ভর করে এক রাজ্য থেকে ওপর রাজ্যে এলপিজি সিলিন্ডারের মূল্যবৃদ্ধি নির্ভর করে। এছাড়াও অপরিশোধিত তেলের দামের ওপরেও নির্ভর করে এই এই এলপিজি সিলিন্ডারের দামের কমাবাড়া।
বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খুচরো বিক্রেতারা প্রতি মাসের শুরুতে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কত হবে তা ঠিক করে থাকেন।
বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির জেরেই রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
এখানেই শেষ নয় রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির জেরে উজ্জ্বলা প্রকল্পের উপভোক্তারাও অনেকেই মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন। এমতবস্থায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়ে ছিলেন উদ্ভূত বোঝা কিছুটা কমাতে বছরে ১২ বার সিলিন্ডার প্রতি ২০০ টাকা ভর্তুকি দেওয়া হবে।
তবে রথযাত্রার দিন বাণিজ্যিক গ্যাস সিলিন্ডারের দাম কমায় রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি। কলকাতায় এর আগে ১৯ কেজির বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দাম ছিল ২ হাজার ৩২২ টাকা। তবে এবার সিলিন্ডার প্রতি ১৯৮ টাকা দাম কমায় এর নতুন দাম হল ২ হাজার ২১ টাকা। স্বভাবতই বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দাম কমার জেরে স্বস্তিতে একাংশের ক্রেতারা।
এই নিয়ে গত একবছরে এই নিয়ে আটবার দাম বাড়ল রান্নার গ্যাসের। এই নিয়ে বিরোধীরা তীব্র বিধেছেন কেন্দ্রের মোদি সরকারকে এক বছরে মোট আটবারে ২৪৪ টাকা বেড়েছ রান্নার গ্যাসের দাম। স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধীরা সরব হয়েছেন।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এই এক বছরে কিভাবে বেড়েছে রান্নার গ্যাসের দাম।
১ জুলাই ২০২১ ২৫ টাকা ৫০ পয়সা
১৭ আগস্ট ২০২১ ২৫ টাকা
১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২৫ টাকা
৬ অক্টোবর ২০২১ ১৫ টাকা
২২ মার্চ, ২০২২ ৫০ টাকা
৭ মে, ২০২২ ৫০ টাকা
১৯ মে, ২০২২ ৩.৫০ টাকা
৬ জুলাই, ২০২২ ৫০ টাকা।
এলপিজি সিলিন্ডারের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ট্যুইটারে কেন্দ্রকে বিধেছেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ কয়েকটি স্ক্রিনশটও শেয়ার করেছেন তিনি।
Just Another Day in #NewIndia pic.twitter.com/lbQPazUAgm
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) July 6, 2022
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধিও এই রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। প্রিয়াঙ্কা বলেন সাধারণ মানুষের কোমর ভেঙে দিচ্ছেন মোদি। ময়দা, পনির, দইয়ের মত খাদ্য সামগ্রীতে জিএসটি চাপানোর পর এবার এলপিজি সিলিন্ডারে ৫০ টাকা দাম বাড়ানো হল।