ইনামুল হক, বসিরহাট: ‘বিবিধের মাঝে মিলন মহান’ এই মর্মবাণীকে যথার্থভাবে প্রতিফলিত করতে চায় একটি আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কনকর্ড অ্যাকাডেমি। উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগর ব্লকের রাঘবকাটি-সৈয়দকাটি মোড়ে গড়ে উঠেছে সম্প্রীতির মেলবন্ধনে প্রতিষ্ঠিত এই ভিন্নধর্মী শিক্ষালয়টি। আল মালিক ওয়েলফার ট্রাস্টের একটি ইউনিট কনকর্ড অ্যাকাডেমিতে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পঠন পাঠনের পরিকাঠামোসহ রয়েছে আবাসিকভাবে সব সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনোর সুযোগ।
ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট রবিউল হোসেন খান জানান, মূল উদ্দেশ্য শিশুমনকে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে মিলন ও ঐক্যের মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত করা। প্রতিবেশী বা সহনাগরিক হিসেবে পারস্পরিক মূল্যবোধের অভাব পূরণে ছাত্র জীবন থেকে একই ছাদের তলায় পঠন পাঠন, একই কক্ষে শয়ন, একই প্রাঙ্গনে খেলাধুলো ও শরীরচর্চা এবং একই হাঁড়ির খাদ্যাভ্যাসের মধ্য দিয়ে সহোদর ভাইয়ের মতো ভ্রাতৃত্ববোধ ও পারস্পরিক ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে এর থেকে আর কোন উৎকৃষ্ট পথ হতে পারে বলে মনে হয় না।
এই প্রতিষ্ঠানে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের শতাধিক পড়ুয়া আবাসিকভাবে শিক্ষা গ্রহণ করছে। ইংরেজিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে আরবি, সংস্কৃত এর মত ভাষা শিক্ষাসহ বিভিন্ন ধর্মের মূলমন্ত্র ও সমন্বয়ের পাঠও দেওয়া হয় এখানে।
বিশ্বনবী সা. এর অমিয়বাণী- এতিমের পাশে দাঁড়িয়ে তার মাথায় হাত রাখো। কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বেড়াজালে সীমাবদ্ধ না রেখে মুসলিম এতিম সোহাগ সরদার, আল হেলাল হোসেনদের পাশাপাশি রাজ মন্ডল, শান্তনু মন্ডলসহ আমরা দশজন হিন্দু অনাথ বাচ্চাকেও প্রতিপালিত করছি। তাদের লেখাপড়া, ভরণপোষণের ব্যয়ভার সমস্তটাই আল মালিক ওয়েলফার ট্রাস্ট বহণ করে থাকে।
ট্রাস্ট-এর সম্পাদক ইনামুল হোসেন খান, কোষাধ্যক্ষ তনুজা খান , ম্যানেজিং ডিরেক্টর আশিক ফয়সাল ও আসাদুজ্জামান খানদের তত্ত্বাবধানে এবং শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রচেষ্টায় কনকর্ড অ্যাকাডেমি তার লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে চলেছে। এ বছর প্রথম মাধ্যমিকের পড়ুয়ারা সকলেই সাফল্য অর্জন করেছে। সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপক অয়ন গাজী( ৫৯৪)। প্রায় ১২ বিঘা জমি জুড়ে সম্পূর্ণ প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠানে আধুনিক ক্লাসরুম, কম্পিউটার ল্যাব ও লাইব্রেরি সহ ইনডোর ও আউটডোর গেমের ব্যবস্থা আছে। আছে কুরআন চর্চা ও নামাযের জন্য ঘর। অমুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক প্রার্থনা কক্ষ।
আবাসিক ও অনাবাসিক মিলিয়ে বারো জন শিক্ষক শিক্ষিকা এদের পরিচর্যায় নিয়োজিত। রয়েছে নিজস্ব কিচেন গার্ডেনে সবজি ফলানোর ব্যবস্থা। যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার ফাঁকে চাষবাস বা সবজি ফসলের উৎপাদন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিতে পারে।
বলাই বাহুল্য, কনকর্ডের মূলমন্ত্র ঐক্য বা মিলনের আহবানে সাড়া দিয়ে এখানকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অভিভাবকরাও শামিল হয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার এক অনন্য নজির তৈরি করে।