নবী হযরত মুহাম্মদ সা. সম্পর্কে চরম আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন বিজেপির এক মুখপাত্র। তাই নিয়ে দেশ সহ গোটা বিশ্বে প্রতিবাদ ধ্বনিত হচ্ছে। তাঁরই মতো সোস্যাল মিডিয়ায় ক্রমাগত গর্হিত পোস্ট করে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছিলেন রাজস্থানের উদয়পুরের কানহাইয়ালাল নামে এক দর্জি। তাঁকে পুলিশ এই নিয়ে সাবধানও করেছিল। তবুও তাঁর বিদ্বেষ পোষ্ট অব্যাহত থাকে। তাই বলে তাঁকে হত্যা করা হবে, এমন নিদান ইসলাম দেয় না। কেউ অপরাধ করলে বা অন্যের বিশ্বাস- মর্যাদায় ইচ্ছাকৃত আঘাত দিলে আইনানুগ তাঁর শাস্তি হওয়া উচিত, এমনটাই বলছেন বাংলার বিশিষ্ট মুসলিম বুদ্ধিজীবী ও আলেমরা। কয়েকজনের মতামত শুনলেন প্রদীপ মজুমদার ও সেখ কুতুবউদ্দিন
ইশহাক মাদানী, মাওলানাঃ বিচার নিজের হাতে তুলে নেওয়া অপরাধ। নবী সা. -এর যুগ থেকে হয়ে আসছে। মুসলিম, অমুসলিম যিনিই হোক, কেউ কোনও কথা বললে, তার পরিপ্রেক্ষিতে হত্যা করলে তা চরম অপরাধ। মানবতা, শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা সকলের কর্তব্য। একজনকে হত্যা করা হলে মানবকুলকে হত্যা করার সামিল। উদয়পুরে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা নিন্দনীয়।
শফিক কাশেমি, মাওলানা, নাখোদা মসজিদঃ অপরাধীর কোনও ধর্ম নেই। দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের মাধ্যমে শাস্তি দিতে হবে। অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া আইন-আদালতের কাজ। কোনও ব্যক্তির উচিত নয় আইনকে হাতে তুলে নেওয়া। আর সাধারণ মানুষ শান্তি ও সম্প্রীতির মধ্যেই থাকতে চান। কিন্তু রাজনীতির কারবারীরা মানুষকে নিয়ে খেলা করছে। এই বিভাজনের খেলা বন্ধ হওয়া দরকার।
আহমদ হাসান ইমরান, সাবেক সাংসদ ও পুবের কলম -এর সম্পাদকঃ রাজস্থানের উদয়পুরে যে নৃশংস হত্যার ঘটনা ঘটেছে, আমি তার ভরপুর নিন্দা করছি। কোনও অবস্থাতেই এই ধরনের ঘটনা হওয়া উচিত নয়। যারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের সঙ্গে ইসলামী শিক্ষা ও চেতনার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। হতে পারে নিহত ভদ্রলোক নবী সা.-র বিরুদ্ধে অবমাননাকর পোস্ট করেছেন। পুলিশ তাকে আগে গ্রেফতারও করেছিল। কিন্তু যেভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, তার সঙ্গে হজরত মুহাম্মদ সা.-এর শিক্ষার কোনও সম্পর্ক নেই। নবী সা. ক্ষমা করতে ভালোবাসতেন। আর তিনি ক্ষমার উদাহরণ রেখে গেছেন। এ ধরনের ঘটনা শুধু ঘৃণা-বিদ্বেষ বৃদ্ধি করে।
আবদুর রফিক, রাজ্য সভাপতি, জামাআতে ইসলামি হিন্দঃ উদয়পুরের ঘটনা বর্বরোচিত। এর সঙ্গে ইসলামের কোনও সম্পর্ক নেই। ইসলামের কোনও অনুসারী এই ঘটনা ঘটাতে পারে না। দেশে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কাম্য নয়। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের কঠোর শাস্তি চাই। এই ঘটনাকে নিয়ে যাতে অশান্তি তৈরি না হয়, সেদিকে প্রশাসনকে নজর রাখতে হবে। ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা প্রয়োজন। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অন্য ঘটনাতেও প্রশাসন সক্রিয় ভূমিকা পালন করুক।
ওয়ায়েজুল হক, রাজ্য সভাপতি, বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চঃ রাজস্থানের উদয়পুরের ঘটনা নিন্দনীয়, এর সঙ্গে ইসলামের কোনও যোগসূত্র নেই। ইসলাম কথার অর্থ শান্তি। অর্থাৎ কোনও শান্তি প্রিয় ধর্মপ্রাণ মুসলমান কাউকে হত্যা করতে পারে না। আমি মনে করি, এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত, তাহলে আসল তথ্য সামনে আসবে। আমরা ক’দিন ধরে দেখতে পাচ্ছি নুপূর শর্মার পাশাপাশি কিছু আরএসএস এর মানুষ ফেজ টুপি পড়ে, দাড়ি রেখে ইসলাম ধর্মকে কলুসিত করতে চাইছে। এই ঘটনার সঙ্গে উদয়পুরের ঘটনার যোগসূত্র থাকতে পরে। এর সঠিক তদন্ত হওয়া উচিত। এর দায়ভার কোনও অবস্থাতেই ইসলাম ধর্ম মেনে নেবে না।
ইমানুল হক, ভাষা ও চেতনা সমিতিঃ এ দেশে সংঘ পরিবার বিদ্বেষের রাজত্ব চালু রাখতে চাইছে। দর্জি কানাইয়ালালকে হত্যা করা হয়েছে। এই ধরণের ঘটনা নিন্দনীয়। দেশে দারিদ্রতাই বিদ্বেষের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসলাম বিদ্বেষকে প্রশ্রয় দেয় না, মানবতার শিক্ষাই দেয়। বিদ্বেষের দুষ্ঠুচক্র কাজ করছে। হিংসা দিয়ে হিংসা ঠেকানো যায় না। কোনওরকম ফাঁদে পা না দেয়, তার জন্য সতর্ক থাকতে হবে।
মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক, সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনঃ রাজস্থানের উদয়পুরের হিংসাত্মক ঘটনার তীব্র ভাষায় নিন্দা জানাচ্ছি। কোন অপরাধের জন্যই এভাবে আইন হাতে তুলে নেওয়াকে সমর্থন করি না। দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের সকলের আস্থা রাখা প্রয়োজন। এমন কিছু ভুল কাজ করা কখনই উচিত নয়, যার ফলে সমগ্র মুসলিম সমাজ অপমানিত বোধ করে। কিছু অশুভ শক্তি চাইছে দেশে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ব বিনষ্ট করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে। তার বিরুদ্ধে অবশ্যই আমাদের গণতান্ত্রিক পথে লড়তে হবে। অশুভ শক্তি যে চক্রান্তের ফাঁদ বিছিয়ে রেখেছে, তাতে কোনো ভাবেই পা না দেওয়ার জন্য সর্বস্তরের মানুষের কাছে সবিনয় নিবেদন জানাচ্ছি।