শুভজিৎ দেবনাথ,ডুয়ার্স: রাতের অন্ধকারে ডুয়ার্সের চা – বাগানগুলোর শ্রমিকদের ত্রাস বুনো হাতি। আর সেই বুনোদের ত্রাস “মস্তান”! বানারহাট ব্লকের গয়েরকাটা চা- বাগানের শ্রমিকদের এখন বড় ভরসা এই “মাস্তান”। তবে বুঝতেই পারছেন এই “মস্তান ” সেই হোমড়াচোমরা চেহারার মনুষ্য শরীর ধারি কেউ নন।
ইনি মানুষের হাতে যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরী চার পেয়ে ট্রাক্টর। আমরা সকলেই জানি সাধারণত চাষবাষের কাজে লাগে ট্রাক্টর। পাশাপাশি, পেছনে ডালা লাগিয়ে বাগান থেকে তোলা চা- পাতা বহন করে কারখানা অবধি পৌছে দেওয়ার জন্যও ট্রাক্টর ব্যবহার হয় চা- বাগানে। কিন্তু গয়েরকাটা চা- বাগানে একটি ট্রাক্টর ব্যবহার করা হচ্ছে হাতি তাড়াতে।
উল্লেখ্য, ডুয়ার্সের বনাঞ্চল লাগোয়া চা- বাগানগুলির শ্রমিক মহল্লায় হাতির হামলা নিত্যদিনের ব্যাপার। হাতির হানায় বাড়িঘরের ক্ষতি তো হয়ই। পাশাপাশি, প্রানহানির ঘটনাও ঘটে থাকে। গয়েরকাটা চা বাগানও তার ব্যতিক্রম নয়। হাতি আসুক কি না আসুক, সারা রাত বাগানের প্রতিটা লাইনে টহল দেয় মস্তান।
আর তার গরঘর গরঘর আওয়াজে যেন লেজ তুলে পালিয়ে বাঁচে হাতির দল। রাতের বেলায় মোবাইল ফোনের রিংটোনটা বাজলেই তৎক্ষনাৎ সজাগ হয়ে যায় মস্তানের সারথি। শুধু যেন শোনার অপেক্ষা ঠিক কোথায় বেরিয়েছে হাতি, সাথে সাথে দমকল বাহিনীর তৎপরতার মতই মস্তানকে নিয়ে সে জায়গায় উপস্থিত হয় বাগানবাসীর ভগবান কৃষ্ণ রূপের কৃষ্ণা ইন্দোহার, মস্তানের চালক। বাজি-পটকা ফাটানোর চাইতেও হাতি তাড়াতে বেশি ওস্তাদ এই মস্তান, বলছেন গ্রামবাসীরা।
মাত্র তো হাতে গোনা কয়েকজন বন কর্মী, তাদের খবর দিলে কখন আসবেন! অতদূর থেকে আসতেও লাগবে সময়। তার চাইতে কৃষ্ণা ইন্দোহারের মস্তান ঢের ভালো, এমনই দাবি তাদের।বানারহাট ব্লকের গয়েরকাটা চা- বাগানে এভাবেই চলছে মস্তানের মস্তানগিরী।জানা যায়, বাগানের শ্রমিকরাই বিপদতারিনী এই ট্রাক্টরের নাম দিয়েছে মস্তান।বাগানের শ্রমিক নেতা বিরাজ লাকরা জানান, বনকর্মীরা আসুক চায় না আসুক।
রাতের অন্ধকারে মস্তান আসলেই বাগানের শ্রমিকরা নিশ্চিত। মস্তানের চালক কৃষ্ণা ইন্দোহার জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে বাগানের ১১টি মহল্লায় মস্তানকে নিয়ে টহল দেন তিনি সহ আরও দু-জন। কোথাও হাতি বেরিয়েছে খবর আসলেই সে এলাকায় ছুট লাগায় মস্তান। অস্ত্র বলতে তাদের হাতে থাকে বড় বড় জোরালো আলোর টর্চ লাইট। রাতের নিস্তব্ধতায় ধেয়ে আসা মস্তান আর তার বিকট আওয়াজে লেজ তুলে দৌড় লাগায় হাতির দল। তিনি আরও বলেন, বাগান কর্তৃপক্ষই ব্যবস্থা করেছে হাতি তাড়াতে এই অভিনব পদ্ধতি।