পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গা মামলায় রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সমস্ত অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছিল বিশেষ তদন্তকারী সংস্থা বা সিট। নরেন্দ্র মোদিকে সিটের ক্লিনচিট দেওয়ার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরির বিধবা জাকিয়া জাফরি।
শুক্রবার জাকিয়ার মামলা খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এ এম খানউইলকার, বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরী এবং বিচারপতি সিটি রবিকুমারের বেঞ্চ।
এই মামলায় স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের রায়কে বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। মামলাটি বন্ধ করে দেওয়ার যে রিপোর্ট বিশেষ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পেশ করেছিল সিট, সেই রিপোর্ট মেনে নিয়ে মামলাটি বন্ধ করার রায় দিয়েছিলেন বিশেষ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। এ দিন সেই রায়কেই বহাল রেখেছে শীর্ষ আদালত।
এই রায়কে স্বাগত জানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সত্য সোনার মতো জ্বলজ্বল করে বেরিয়ে এসেছে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভগবান শিব যেমন বিষ পান করে তা কণ্ঠে ধারণ করেছিলেন’ মোদিও ১৯ বছর ধরে নীরবে ব্যথা সহ্য করেছেন। কেন্দ্রীয়মন্ত্রী বলেন, ১৯ বছরের এক যুদ্ধ। এত বড় একজন নেতা শুধু নীরব থেকেছেন। ভগবান শিবের মতো বিষ সমস্ত ব্যথা সহ্য করে লড়াই চালিয়ে গেছেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট সমস্ত অভিযোগ খারিজ করেছে। বোঝাই যাচ্ছে অভিযোগগুলি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল, সেটিও প্রমাণিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আহমদাবাদে কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ এহসান জাফরি-সহ ৬৯ জন নিহত হয়েছিলেন সাম্প্রতিক দাঙ্গায়। এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরি এই মামলায় গুজরাতের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী-সহ ৬৪ জনকে সিটের ক্লিনচিট দেওয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। প্রাক্তন সিবিআই প্রধান আর রাঘবনের নেতৃত্বাধীন সিট দাঙ্গা মামলায় তদন্ত করে তাদের রিপোর্টে জানিয়েছিল এই দাঙ্গায় জড়িত থাকার অভিযোগ গুজরাতের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে প্রমাণিত নয়। এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যাতে মোদির বিরুদ্ধে মামলা করা যায়।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গুজরাত দাঙ্গার তদন্ত শুরু করেছিল সিট। ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর জাকিয়া জাফরি শীর্ষ আদালতে আর্জি জানান যে, গুজরাত দাঙ্গার পেছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হোক। তিনি এ অভিযোগও করেন যে, সিট গুজরাত দাঙ্গার সঠিক তদন্ত করেনি। কিন্তু এ দিন সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ জাকিয়ার অভিযোগের কোনও ‘সারবত্তা’ খুঁজে পায়নি।
ফলত, জাকিয়ার মামলা এ দিন খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। আদালতে জাকিয়ার ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’-এর অভিযোগের তীব্র বিরোধিতা করেছিল সিট।
সমাজকর্মী তিস্তা শীতলবাদের প্ররোচনায় জাকিয়া বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে বাজার গরম করতে চাইছেন। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে গুজরাত হাইকোর্টে নরেন্দ্র মোদিকে সিটের ক্লিনচিট দেওয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন শীতলবাদ।
কিন্তু হাইকোর্ট সেই মামলাও খারিজ করে দেয়। হাইকোর্ট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের রায়কে বহাল রেখে জানিয়ে দেয় সিট মামলাটি বন্ধ করে দিয়ে সঠিক কাজ করেছে।
সুপ্রিম কোর্ট এ দিন জাকিয়ার মামলা খারিজ করে দিয়ে বলেছে, অন্যের উসকানিতে এই মামলা করা হয়েছে। সিটের তদন্তের উপর সন্দেহ করা মানে তাদের দক্ষতা এবং আন্তরিকতার উপর সন্দেহ করা।
গুজরাত দাঙ্গার জঘন্যতম ঘটনা ঘটেছিল আহমদাবাদের গুলবার্গ সোসাইটিতে, যেখানে বাস করতেন মূলত মুসলিমরা। জাকিয়া জাফরির অভিযোগ, এখানে এহসান জাফরি-সহ ৬৯ জন মুসলিমকে টেনে-হিচড়ে বের করে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল দাঙ্গাবাজরা।
প্রাক্তন সাংসদ হওয়া সত্ত্বেও সাহায্যের আবেদন জানিয়ে এহসান জাফরির ফোনের উত্তর দেয়নি কোনও পুলিশ আধিকারিক কিংবা রাজনীতিবিদ। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সিট এই মামলাটি বন্ধ করে দেয়। তারা গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-সহ ৬৩ জনকে প্রমাণের অভাবে অভিযোগ মুক্ত ঘোষণা করে।