ডাঃ ফারুখউদ্দিন পুরকাইত, একজন বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। দক্ষিণ ২৪ পরগণার ফলতায় তাঁরই উদ্যোগে গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক হৃদরোগ চিকিৎসাকেন্দ্র ‘আশ-শিফা হসপিটাল’। তিনি হলদিয়া মেডিকেল কলেজের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর। বুকে ব্যথা কিংবা হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তড়িঘড়ি করণীয় কী? ডাঃ ফারুখউদ্দিনের পরামর্শ শুনলেন প্রদীপ মজুমদার
এনজাইনা বা বুকে ব্যথা হলেই কি ধরে নিতে হবে হৃদরোগের উপসর্গ?
সব বুকে ব্যথাই হৃদরোগের কারণ না। তবে কার্ডিয়াক ঢেকআপ বা টেডমিল টেস্ট করে নিশ্চিত হওয়া দরকার হার্টের সমস্যা, নাকি অন্য কিছু।
হার্ট অ্যাটাক্ট কী করে বোঝা যাবে?
আগে নির্দিষ্ট কিছু বাধাধরা নিয়ম ছিল, বুকের বামদিকে ব্যথা হলে প্রচণ্ড ঘেমে যাবে এবং বাম দিকটা অবশ হতে থাকবে। যন্ত্রণা করবে পিঠের পিছন দিকটাও। তবে সব সময় এই উপসর্গ দেখা দেয় না। বিশেষ করে ডায়াবেটিস বা কিডনির সমস্যা যাঁদের, তাঁদের এই ধরণের উপসর্গ নাও দেখা দিতে পারে।
এমন হলে আপনি কি পরামর্শ দেবেন?
দমের কষ্ট বা বুক ধরপর করলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে ইসিজি এবং ট্রপ-টি পরীক্ষা করলে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ নিশ্চিত হওয়া যায় হৃদরোগ আছে কিনা।
অনেকে গ্যাসের সমস্যা মনে করে গ্যাসের ওষুধ ও প্রচুর জল খেয়ে নেন। গ্যাসের ওষুধের সঙ্গে অল্প জল খেলে সমস্যা নেই, কিন্তু ওই সময় অতিরিক্ত জলপান ঠিক নয়।
এমন সমস্যা হলে কি করা উচিত?
হঠাৎ বুকে ব্যথা হলে ডাক্তার না পেলেও অন্তত ওষুধের দোকান থেকে নির্দিষ্ট তিনটি-র যে কোনও ওষুধ নেওয়া খেতে পারে। একে বলে অ্যান্টি প্লেটলেট লোডিং। এতে ৩৫ শতাংশ মৃত্যুর হার কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
হার্ট অ্যাটাক্ট, নিশ্চিত হওয়া যাবে কি করে?
তিন ধরনের হতে পারে। মাইনর, মধ্যবর্তি এবং মেজর। প্রথম দুই ক্ষেত্রে প্রাথমিক ওষুধের পর বিলম্ব না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আর মেজর এনজাইনার ক্ষেত্রে কাল বিলম্ব না করে নিকটবর্তি কোনও হার্ট ক্লিনিক বা সুপার স্পেসালিটি চিকিৎসা সেন্টারে রোগীকে নিয়ে যাওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় পাওয়া যায়, বিশেষ ইনজেকশন দেওয়া জরুরি, নয়তো বেলুন সার্জারি করা দরকার। এতে বিপদ থেকে মুক্তি মেলে।
হার্ট অ্যাটাক্ট থেকে রেহাই পেতে, অর্থাৎ হৃদযন্ত্র সুস্থ্য রাখতে কী করণীয় বলে আপনি মনে করেন?
আগে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিতেন ওষুধ, পথ্য এবং বায়ু পরিবর্তনের। বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, ওষুধ এবং সামান্য পথ্য। সব থেকে জরুরি মানসিক শান্তি। হৃদরোগের প্রধান কারণ ডিপ্রেশন বা অত্যাধিক দুশ্চিন্তা। আমরা ক্রীড়াবিদ বা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দিকে যদি দৃষ্টিপাত করি তবে দেখতে পাবো, তাঁরা তো শরীর ফিটনেস রাখতে যথেষ্ট যত্নবান। জিম থেকে ডায়েট সবই। তা সত্ত্বেও তাঁদের হৃদরোগে আক্রান্ত হতে হচ্ছে- কারণ সেই টেনশন বা দুশ্চিন্তা।
আমার পরামর্শ হলো –
নিয়মিত জিম না করলেও অল্প বিস্তর শারীরিক কসরত বা ব্যায়াম করা দরকার।
দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা দরকার
৪০-এর উপর বয়স হলে বছরে অন্তত একবার হার্টের চেকআপ করা প্রয়োজন।
খাবারে মাছ-মাংস-ডিম থাকলে অসুবিধা নেই। তবে তেল-চর্বি-মশলা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা।
আর দরকার পরিমিত ঘুম।
আমরা জানি কোলস্টেরল বৃদ্ধি হার্টের রোগ বাড়ায়।
হ্যাঁ, কোলস্টেরল দু’ধরণের আছে। গুড কোলেস্টেরল এবং ব্যাড কোলেস্টেরল। গুড কোলেস্টেরল ব্যাড কোলেস্টেরলকে অপসারিত করে। পাতা যুক্ত সবজি, টাটকা ফল গুড কোলেস্টেরল। কিন্তু ফল ফ্রিজে রেখে খেলে তা উপাদেয় নয়। আবার কাজু-আলমণ্ড-আখরোট ইত্যাদি পাঁচ রকমের বাদাম ভিজিয়ে রোজ বিকেলে ৫ গ্রাম করে খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
হার্টের চিকিৎসা তো খুব ব্যয় বহুল?
হ্যাঁ, তবে আগে থেকে হার্ট সুস্থ রাখা দরকার সেই কারণে। তবে আমাদের আশ-শিফা হাসপাতালে রাজ্যের মধ্যে সব চাইতে কম খরচে হার্টের অত্যাধুনিক চিকিৎসা হচ্ছে। গরীব মানুষদের জন্য রয়েছে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা।
যোগাযোগঃ ৬২৯৫১২২৯৩৭