শুভায়ুর রহমান, খড়গ্রামঃ গ্রামের লোক বলতো ‘চাষার ছেলে চাষা হবে।’ কিন্তু মানুষের মুখের কথা হজম করে নিজ স্বপ্নে বিভোর ছিলেন মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামের সফিরুল ইসলাম ও আমেআরা বেগমের সন্তান বাসিরুল ইসলাম। বাবা ক্ষুদ্র চাষী। খুব সামান্য জমি এতেই চার ছেলে মেয়েকে নিয়ে কষ্টের সংসার। বাবা বলতেন ছেলে ডাক্তার হবে। গ্রামের কেউ কেউ তা হেসে উড়িয়ে দিত। অবশেষে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে গত ২৫ মে খড়গ্রামের মাড়গ্রাম প্রাইমারি হেলথ সেন্টারে ডাক্তারি জীবন শুরু করেছেন বাসিরুল ইসলাম। ২০১৫ সালে রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্সে ১৩১৩ র্যাঙ্ক করে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।
২০২১ সালে ডাঃ বাসিরুল ইসলাম মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ডাক্তারি পাস করেন। অন্যদিকে ভাইয়ের দেখানো পথেই হাঁটছে চাচাতো বোন মৌসুমি ইয়াসমিন। মৌসুমি বর্তমানে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম বর্ষে পাঠ্রত। মৌসুমি ইয়াসমিনের বাবা মহম্মদ মনিরুল ইসলাম ষোল বছর আগে গত হয়েছেন। তাঁর মা সাবিনা ইয়াসমিন দুই মেয়েকে নিয়ে খুব কষ্টে সংসার চালান। মৌসুমি ইয়াসমিন জানান, আমি যখন ক্লাস টু তে পড়ি তখনই আমার বাবা মারা যান। যে সপ্তাহে মারা যান তার পরের সপ্তাহে বাবার প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক পদের কল আসে। কিন্তু তা পূরণ হয়নি। ছোট্ট মুদির দোকান ছিল মৌসুমির বাবার। মৃত্যুর পর সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। চাচাদের সহযোগিতায় আর বাবার সামান্য জমি ছিল তা থেকেই কষ্টেসৃষ্টে চলে যায়। মৌসুমির প্রাথমিক শিক্ষা ছিল গ্রামের স্কুলেই। ২০২১ সালে নীট র্যাঙ্ক ১৩৫৭৬ (অল ইন্ডিয়া) হয়।
চাচার ছেলে বাসিরুল ডাক্তারিতে ভর্তি হয়। বোনেরও মনে ডাক্তার হওয়ার আরও বাসনা তৈরি হয়। ভাই এখন সরকারি ডাক্তারি হিসেবে জীবন শুরু করেছে। সেই পথ ধরেছে বোনও। ডাঃ বাসিরুল ইসলাম বলেন, আমি তো ডাক্তার হয়েছি। বাবা মা খুশি। আরও খুশি আমার বোনও ডাক্তারিতে চান্স পেয়েছে। চাচা অনেক আগে মারা গেছেন। উনি থাকলে আরও আনন্দ হতো।