পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: দীর্ঘ মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রনা কাটিয়ে অবশেষে কাজে যোগ দিলেন কেতুগ্রামের রেণু খাতুন। মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমান জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরে কাজে যোগ দিলেন রেণু। নার্সিং স্টাফ গ্রেড ২ পদে কাজ করবেন তিনি। নতুন করে স্বাস্থ্য দফতর থেকে কোনও নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এই অফিসে আপাতত কাজ করবেন রেণু, এমনটাই জানিয়েছেন স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব কুমার রায়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো এক সপ্তাহ আগেই দুর্গাপুরে রেণুর হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয় স্বাস্থ্য দফতরের তরফ থেকে। স্বভাবতই কাজে যোগ দিতে পেরে খুশি রেণু।
সাহসী কন্যা ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করলেন। স্বামী শুধুমাত্র সন্দেহের বশে স্ত্রী যাতে সরকারি চাকরি করতে না পারে তার জন্য ধারালো অস্ত্র দিয়ে ডান হাত কবজি থেকে কাটতে দ্বিধা করেনি। কিন্তু স্বামী অত্যাচারে জর্জরিত রেণু থেমে থাকলেন না। হাসপাতালের বিছানা থেকে শুরু করেন ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। বাঁ হাতে লিখতে শুরু করেন তিনি। রেণুর বক্তব্য, বাঁ হাতে লিখতে তিনি সড়গড় হয়ে উঠেছেন। ইংরেজি, বাংলা বাঁ হাতে লিখতে পারছেন। দৈনন্দিন কাজগুলিও করে নিতে পারছেন। সকল মেয়েদের উদ্দেশেই রেণুর বার্তা ছিল, নির্যাতনের ঘটনায় মেয়েরা যেন সব কিছু সহ্য করে চুপ করে বসে না থাকে। লড়াই যেন থেমে না থাকে।
দুর্গাপুরের একটি হাসপাতালে নার্সের কাজ করতেন রেণু খাতুন। সঙ্গে থাকতেন তার স্বামী শের মহম্মদ। বরাবরই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন রেণু। তাই সরকারি চাকরির পরীক্ষার দেওয়া শুরু করেন। সরকারি চাকরি পেয়েও যান রেণু। শুধু অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার আসার দেরি ছিল। কিন্তু তার আগেই রেণুর সঙ্গে ঘটে এক নারকীয় ঘটনা। রেণুর স্বামী শের মহম্মদকে তার বন্ধুরা বোঝায় সরকারি চাকরি পেয়ে আর তার সঙ্গে থাকবে না রেণু। এর পরেই বন্ধুদের যোগসাজশে এক রাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ডানহাতে কবজি থেকে রেণুর হাত কেটে দেয় শের মহম্মদ। হাসপাতালে শুরু হয় রেণুর চিকিৎসা। ঘটনার পরেই এলাকা ছাড়া হয় শের মহম্মদ সহ তার বাড়ির লোকেরা। পুলিশ পরে শের মহম্মদ, শ্বশুর শাশুড়ি-সহ ৬ জনকে গ্রেফতার করে। তার পরেই শুরু হয় রেণুর লড়াই। খবর শুনে তাঁর পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেণুর কাটা হাতে কৃত্রিম হাত বসানোর আশ্বাস দেন।