সেখ কুতুবউদ্দিলন: সাধারণত গাড়ি চলে পেট্রোল-ডিজেল, কেরোসিন, গ্যাস, ইলেকট্রিক থেকে। এতে সমস্ত খনিজ সম্পদ দিনের পর দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর বিকল্প কিছু ভাবতে কলকাতা সহ অনান্য শহরে ব্যাটারিচালিত গাড়িও চলতে শুরু করেছে। কিন্তু এই ব্যাটারি চালিত গাড়িতে চার্জ করার জন্য যে বিদ্যুৎ শক্তির প্রয়োজন হয়, তাও আসে এই খনিজ সম্পদ থেকে।
গবেষক ড. সেখ রিয়াজ উদ্দিনের কথায়, বর্তমানে যে সব যানবাহন ব্যবহার করা হয়, তার অধিকাংশই জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভলশীল। এই জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে অধিকার করে রয়েছে পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন এবং প্রাকৃতিক গ্যাস। এ দেশের সিংহভাগ জ্বালানি আসে বাইরের দেশ থেকে। বাইরে দেশ থেকে আমদানি হওয়ার জন্য দিনের পর দিন এই সমস্ত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা মানুষকে নাজেহাল করে তুলছে। পাশাপাশি পরিবেশও দুষিত হচ্ছে। তাপমাত্রা বাড়ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষের মারণরোগেরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ড. রিয়াজউদ্দিনের গবেষণা অনুসারে জল বা পানি থেকে ইঞ্জিন চালানো। এই পদ্ধতিতে প্রথমে হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরি করা হয়। যেটা জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
ড. রিয়াজ তাঁর গবেষণায় টিন, নিকেল, কপার জাতীয় সহজলোভ্য দ্রব্য দিয়ে এমন কিছু ন্যানো অনুঘটক তৈরি করেছেন, যেটা সহজেই জল থেকে হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরি করতে পারে। এই হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরির জন্য যে অতিরিক্ত শক্তির দরকার হয়, তা তিনি সৌর শক্তিকে ব্যবহার করেছেন।
এদিকে তাঁর এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি ন্যানো জার্নালে।
এই গবেষণার জন্য পঞ্জাবের মহালির ইনস্টিটিউট অফ ন্যানো সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁকে ‘গোল্ড মেডেল’ অথবা ‘বেস্ট থিসিস অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়েছে।
এই হাড্রোজেন গ্যাসকে দুই পদ্ধতিতে যানবাহনের জীবাশ্ব জ্বালানির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। জীবাশ্ব জ্বালানি চালিত ইঞ্জিনের মতো হাইড্রোজেন চালিত ইঞ্জিন ব্যবহারের মাধ্যমে এবং ফুয়েল কোষ তৈরির মাধ্যমে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এতে পরিবেশ দূষণ কোনও গ্যাস বা পদার্থ নির্গত হয় না।
প্রসঙ্গত, এই ধরণের গবেষণার জন্য সম্প্রতি কেন্দ্র সরকার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন ন্যাশনাল হাইড্রোজেন মিশন ঘোষণার মাধ্যমে।
এ দেশে এই প্রযুক্তি আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি ভবিষ্যতে অল্প সময়ের জন্য সৌদি আরবের কিং আবদুল্লাহ ইউনিভারসিটি অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খ্যাতিসম্পন্ন বৈজ্ঞানিকের সঙ্গে পোস্ট ডক্টরেট বা গবেষণার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি তাঁর এই গষেণাকে দেশের কাজে ব্যবহার করতে চান।
গ্রামের স্কুলে প্রাথমিকের পাঠ শেষ করে পঞ্চাননতলা হাই স্কুলে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ। আল আমীন মিশনের বর্ধমানের কেশবগঞ্জ ব্রাঞ্চ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ।
আলিগড় মুসলিম ইউনিভারসিটি থেকে ফিজিক্সে বিএসসি এবং এমএসসিতে উত্তীর্ণ। মহালির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ এবং ইনস্টিটউট অফ ন্যানো সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি প্রতিষ্ঠান থেকে ফিজিক্সের ন্যানো সায়েন্স-এর গবেষণায় তিনি পিএইচডি অর্জন করেছেন।
ইনস্টিটউট অফ ন্যানো সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি প্রতিষ্ঠানে পোস্ট ডক্টরেল সাইনটিস্ট হিসেবে গবেষণা করছেন। এই গবেষণায় সহায়তায় রয়েছেন অধ্যাপক কৌশিক ঘোষ। আগামীতে নামি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গবেষণার কাজেই নিযুক্ত থাকতে চান কৃষক পরিবারের ছেলে রিয়াজউদ্দিন।
এই গষেণায় অনুপ্রেরণা শিক্ষকদের পাশাপাশি তাঁর আব্বা সেখ বাগবুল ইসলাম, মা আমিনা বিবি এবং স্ত্রী ওহাহিদা খাতুনের। বাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া ব্লকের বাঁধমূড়া গ্রাম।