পুবের কলম প্রতিবেদক: স্বাস্থ্য পরিষেবা। তাও আবার গ্রামীণ এলাকায়! দুই দশক আগে এ ছিল অনেকটা স্বপ্ন। এখন কিন্তু বর্তমান সরকার রাজ্যের জেলারগুলির বিভিন্ন শহরে তৈরি করেছে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। লক্ষ্য হচ্ছে মানসম্পন্ন চিকিৎসা জেলার মধ্যেই মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। যাতে তাদের শহরের বড় হাসপাতালে ভিড় বাড়াতে দৌড়তে না হয়। বেসরকারি ক্ষেত্রেও অনেকে জেলাগুলিতে উদ্যোগ নিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই অবশ্য অভিযোগ ওঠে, বেসরকারি নার্সিংহোম, হাসপাতাল তা সে জেলায় হোক কিংবা মহানগরে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান থেকেও মুনাফা তাদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে থাকে। কিন্তু ভিন্ন চিত্রও রয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সহরারহাটে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে ডা. ফারুকউদ্দিন পুরকাইত এবং ডা. এনসি সরকার সেই গ্রাম্য এলাকাতেই একেবারে আধুনিক মানসম্পন্ন সেরা চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছেন। তাদের এই প্রতিষ্ঠানের নাম আশ-শিফা হসপিটাল অ্যান্ড কার্ডিয়্যাক সেন্টার। শিফা মানে আরোগ্য। এই বিরাট এলাকাজুড়ে আরোগ্যের বার্তা বহন করছে এই হাসপাতালটি।
রবিবার তার উদ্বোধন করলেন প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কুণাল সরকার। সব ধরনের রোগের চিকিৎসা হলেও এই আশ-শিফা হাসপাতালটি জোর দিয়েছে হার্টের চিকিৎসা, হার্ট সার্জারির উপর। গ্রামীণ এলাকায় যা দুর্লভ। আর এ জন্য তারা নিয়ে এসেছে অত্যাধুনিক ক্যাথ ল্যাব। যা এখনও বহু সরকারি প্রতিষ্ঠানেও নেই।
আশ-শিফা হসপিটাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে ক্যাথল্যাব ও ডায়ালিসিস ইউনিটের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ তথা মেডিকা হাসপাতালের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. কুণাল সরকার, পুবের কলম-এর সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান। এছাড়া ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি জাহাঙ্গীর খান সিএমওএইচ ডা. দেবাশিস রায়, বিডিও সন্দীপ ঘোষসহ হাসপাতালের আধিকারিকরা।
এ দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গ্রামীণ এলাকায় সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন আহমদ হাসান ইমরান। তিনি বলেন, গ্রামীণ এলাকায় চিকিৎসা ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালগুলিও প্রাথমিক পর্যায়ে কাজ করে চলেছে। হাসপাতালের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল, ভালো টেকনোলজি ও ভাল ডাক্তারদের নিয়ে এসে চিকিৎসা করানো।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর সরকারি হাসপাতালের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলির উপরও বিশেষ নজর দিয়েছেন।
আহমদ হাসান ইমরান ডা. কুণাল সরকারের প্রশংসা করে বলেন, এই ধরণের মানুষদের প্রয়োজন রয়েছে যাঁরা ডাক্তার ও উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করছেন।
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পাশাপাশি নার্স, আশা-সহ অন্যান্য কর্মীদের ভূমিকা রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসাকর্মীরাই প্রথমসারিতে ছিলেন। তাই তাঁদের প্রশংসা অপরিসীম বলে বক্তব্যে জানান বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. কুনাল সরকার। তিনি বলেন, দেশে চিকিৎসা পরিকাঠামোয় আগে এত উন্নত ছিল না। এখন চিকিৎসার প্রযুক্তিতে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। এ রাজ্য দুয়ারে সরকার চালু করেছে। স্বাস্থ্যস্বাথী হয়েছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে। আগামীতে দুয়ারে স্বাস্থ্য পরিষেবাও পৌঁছে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
কুণাল সরকার আরও বলেন, বহু রোগ মানুষের মধ্যে রয়েছে, যা একশো কোটির মধ্যে ৮০ কোটি মানুষের রোগ ঠিক সময়ে চিহ্নিত হয় না। সেদিকেও সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। তাঁদের পরিষেবা দিতে হবে। কুণাল সরকার বলেন, যারা মানুষ দেখে না বরং সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘু গোনার চেষ্টা করেন তাঁরা সমাজকেই ধ্বংস করছেন।
ফলতা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি জাহাঙ্গীর খান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন কর্মসূচির প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, মানুষের জন্য কাজ করা। যা আমাদের সব সময়ের জন্য করতে হয়। বেশিরভাগ সময় মানুষের পাশে থাকার জন্যই অতিবাহিত করতে হয় আমাদের। জাহাঙ্গীর খান, এই হাসপাতালের পরিষেবার উদ্যোগের প্রশংসা করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আগামীতেও সবরকম সহযোগিতা করা এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।
আশ-শিফা হাসপাতালের ডিরেক্টর ডা. ফারুকউদ্দিন পুরকাইত জানান, আর্থিক অন্নুনত বা পিছিয়েপড়া এলাকায় চিকিৎসা পরিষেবার জন্য এই হাসপাতাল কাজ করে যাবে। আগামীতে স্বল্প ব্যায়ে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সাল থেকে রোগী পরিষেবার কাজ শুরু হয়েছে আশ-শিফায়। ক্যাথল্যাব ১০০ বেডের এই হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সবরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে, এমাজেন্সি, ওপিডি, ইউএসজি, সিটি স্ক্যান, এক্স-রে, ডেন্টাল, ইসিজি, টিএমটি, ইইজি, ইকো কার্ডিওগ্রাফি, সোনোগ্রাফি ল্যাব্রোটারি প্রভৃতি। ক্যাথল্যাব যুক্ত ১০০ বেডের আশ-শিফা হাসপাতাল। এছাড়া আশ-শিফা হাসপাতালের উদ্যোগে নার্সিং ট্রেনিং ও প্যারামেডিক্যাল কোর্স করানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ দিন আশ-শিফা স্কুল অফ নার্সিং ট্রেনিং অ্যান্ড প্যারামেডিক্যাল সায়েন্সস্ প্রতিষ্ঠানের শিলান্যাস করা হয়।
এছাড়া ছিলেন হাসপাতালের কোষাধ্যক্ষ আবদুল মালেক পুরকাইত, দিলদার হোসেন, হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. মোশারফ হোসেন, ডা. সি বি ঠাকুর, সিইও ডা. সুনন্দা জানা, ডা. সাবিহা নাজ, বসিরউদ্দিন সাপুই সহ হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসক ও কর্মীরা।