নিজস্ব প্রতিনিধি: কেন্দ্রের ‘দাসত্ব’ থেকে মুক্ত করবার জন্য ইডি-সিবিআই সহ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির স্বশাসনের দাবিতে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে রাজ্য মন্ত্রিসভার ২৩তম বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার মতো ঘৃণ্য রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হয়ে বলেন, ‘দেশে এজেন্সি রাজ চলছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। এজেন্সির রুল থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। তাই স্বশাসিত করা হোক কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে।’
মোদি সরকারের বিরুদ্ধেও এদিন ফের তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘দেশে তুঘলকি রাজ চলছে। সব ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে কেন্দ্র। এত নিম্নমানের কাজ স্তালিন, হিটলার, মুসোলিনিরাও করেননি।’
দেশে ক্ষমতার পালাবদলের পরেই মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআই ও আয়কর দফতরের মতো কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলির কাজকর্ম নিয়ে লাগাতার সমালোচনা করে চলেছেন বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরা। প্রতিদিনই বিজেপি বিরোধী নেতা-নেত্রীর বাড়িতে কারণে-অকারণে হানা দিয়ে চলেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ওই হানার পিছনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অদৃশ্য হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের। আর কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি যাতে দিল্লির প্রভুদের অঙুলিহেলনে না চলে, তার জন্য এদিন ইডি-সিবিআইয়ের স্বশাসনের দাবি তুলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এজেন্সিকে ব্যবহার করে তুঘলকি কায়দায় সরকার চালাতে চাইছে। তবে সব এজেন্সি খারাপ তা বলছি না। কিন্তু ওরা সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। তার কারণ ওরা স্বশাসিত নয়। কেননা, দুজনের হাতে (নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ) অটোনমি রয়েছে। দেশকে এজেন্সি রুল থেকে বাঁচাতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে স্বশাসন দেওয়া হোক। কেন্দ্র শুধু বেতন দেওয়ার কাজ করবে।’
তিনিই যে দেশে প্রথম কেন্দ্রীয় এজেন্সির স্বশাসনের দাবি তুললেন, তাও উল্লেখ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে স্বশাসন দেওয়ার দাবি জানানোর পাশাপাশি মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান বলেন, ‘দেশে যা চলছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। এরকম নিকৃষ্টমানের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ স্তালিন, হিটলার, মুসোলিনিও করেননি। আমি আবার দেশকে ভালবাসি। ক্ষমতায় এসে এ ভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা উচিত নয়।’
পেট্রল-ডিজেলের ভ্যাট কমানোর প্রসঙ্গে মমতা বলেন, শনিবারই পেট্রল ও ডিজেলের দাম এক দফায় কমিয়েছে কেন্দ্র। আর তার পরেই রাজ্য সরকার কেন পেট্রল-ডিজেলের উপরে ভ্যাট কমাচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলের নেতারা। এদিন সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘কেউ কেউ বলছেন, এই রাজ্যে এত টাকা কমিয়েছে, ওই রাজ্য অত টাকা কমিয়েছে। কিন্তু সেই বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলো কেন্দ্রের কাছ থেকে কত টাকা পায়, আর আমরা কত টাকা পাই? আমাদের পাওনাই তো দেওয়া হয় না। বার বার বলেছি, বকেয়া পাওনা মেটান। তাছাড়া কেন্দ্র সেস ওঠায়নি। কেননা, সেসের টাকা রাজ্য পায় না, পুরোটাই কেন্দ্রের কোষাগারে যায়।
অকারণে রাজ্যের ঘাড়ে বোঝা চাপাচ্ছে।’ এর পরেই কেরল, রাজস্থান ও মহারাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলায় জ্বালানির দাম কমার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলায় প্রতি লিটার পেট্রলের দাম ২ টাকা ৮০ পয়সা এবং প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ২ টাকা ৩ পয়সা কমেছে। রাজস্থান, কেরল, মহারাষ্ট্রের চেয়ে বেশি কমেছে।’ জ্বালানিতে ছাড় দেওয়ার কারণে ১১০০ কোটি টাকার বাড়তি আর্থিক বোঝা রাজ্য সরকারের কাঁধে চেপেছে বলে উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘পেট্রলে শুল্ক ছাড় দেওয়ায় ২৭৩.৮ কোটি এবং ডিজেলে শুল্কে ছাড় দেওয়ায় রাজ্যের ৩৬৮.৩৭ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। সেস বাবদ ক্ষতি হয়েছে আরও ৫০০ কোটির। সবমিলিয়ে রাজ্যে প্রায় ১১০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।’
এদিন নবান্নে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২,০২০ জন মহিলা কনস্টেবল-আধিকারিক নিয়োগের প্রস্তাবে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১,৪২০ জনকে উইনার্স স্কোয়াডে ও ৬০০ জনকে গোয়েন্দা বিভাগে দেওয়া হবে। তাছাড়া জঙ্গলমহলে স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হবে ১০৫ জনকে। তাদের মধ্যে ৪৮ জন মাওবাদী সংশ্রব ছেড়ে সমাজের মূলস্রোতে ফিরেছেন।’