দেবশ্রী মজুমদার, রামপুরহাটঃ এক অমুসলিম লেখকের কাছে ইসলাম ধর্ম প্রিয় কেন? এমন জিজ্ঞাসা, কৌতূহল খুবই স্বাভাবিক। তবে সেই কৌতূহল নিরসনে এগিয়ে এসেছে দারুল হুদা ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমবঙ্গ ক্যাম্পাসের দুই স্নাতক স্তরের ছাত্র। সারা রমযান মাসে তিনশো পঁয়ত্রিশ (৩৩৫) পাতার ইংরেজি বইটির দৈনিক দশ পাতা করে ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ করেছে। তাদের নাম মুহাম্মদ সোহেল মণ্ডল এবং ওবায়দুল হক। অনুবাদ শেষ। এডিটিংয়ের পর প্রকাশের অপেক্ষায়। তাহলে অনেকেই জানতে পারবেন, একজন হিন্দু বা অমুসলিম কেন ইসলামের এত প্রশস্তি করেছেন মূল গ্রন্থে।
ইসলামফোবিয়া এক মহামারী। ইসলাম কি? তার বিনা চর্চায় চলছে গোয়েবলসীয় কায়দায় অপপ্রচার। সম্প্রতি অনেক অমুসলিম বিদগ্ধ লেখক ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করে বই লিখছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন লেখক এ সাজিবন, ধর্মে তিনি হিন্দু। বাড়ি কেরলে। বহু পুরস্কারে ভূষিত পেশায় সাংবাদিক তিনি।
সম্প্রতি তাঁর ইংরেজি বইn ‘ইসলাম – দ্য বিলাভড টু আ নন মুসলিম’ এক চর্চিত পুস্তক। আর সেই বইয়ের বঙ্গানুবাদ করছেন দারুল হুদা ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমবঙ্গ ক্যাম্পাসের দুই ছাত্র। বাংলায় যার তর্জমা- ‘ইসলাম, এক অমুসলিমের প্রিয়’।
ইসলামের সঠিক চর্চার ফসল মুসলিম এবং অমুসলিম সবাই যে পেয়েছে, তা কিন্তু নয়। অমুসলিমদের মধ্যে মহামতি লিও তলস্তয় ইসলামকে খ্রিষ্টীয় ধর্মের উপরে রাখতে দ্বিধা করেননি। হিন্দু ধর্মভীরু মহাত্মা গান্ধীর কলমেও হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সরলতা, ঈশ্বরের প্রতি উৎসর্গীকৃত প্রাণের প্রশংসা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বলেছেন, আমার বিশ্বাস জন্মেছে তরবারি হাতে ইসলামের প্রসার ঘটেনি। হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর চারিত্রিক সৌন্দর্য ও ঐশী বাণীই ইসলামের প্রসারের মূল কারণ। এত কিছু সত্বেও, বারবার এই ধরণের গ্রন্থের বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হওয়া আজকের অসহিষ্ণুতার দিনে প্রাসঙ্গিক বলে মন্তব্য করেন বিজ্ঞানী ড. মুনকির হোসেন। তিনি দারুল হুদা ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমবঙ্গ ক্যাম্পাসের একজন পৃষ্ঠপোষক। মুনকির সাহেব বলেন, বইটি মূলত: কয়েকটি ভাগে বিভক্ত।
১) ইসলাম কেন? ২) ইসলাম কি? ৩) বিশ্বাস? এটাই সব? ৪) হযরত মুহাম্মদ (সা.) চমৎকার উদাহরণ ৫) ইসলামের সফল্যের রহস্য ৬) ইসলাম কি নারী বিদ্বেষী? ৭) ইসলাম শান্তির ধর্ম, সহিষ্ণুতার ধর্ম ৮) নবী (সা.) কেন অস্ত্র ধারণ করেছিলেন?৯) ইসলামকে কারা সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত করছে? ইত্যাদি। এই বইতে দেখানো হয়েছে কিভাবে পশ্চিমা সংস্কৃতি ইসলামকে সন্ত্রাসের ধর্ম হিসেবে দেখাতে চেষ্টা করছে।
কিন্তু নবী (সা.) প্রফেট হিসেবে বাস্তবতা ও বিশ্বাসকে একসূত্রে বাঁধতে পেরেছেন। কিন্তু তারজন্য কোনও অলৌকিকতার আশ্রয় নেননি, যদিও মানুষকে আকর্ষণ করতে অলৌকিকতাকে ব্যবহার করা হয়, আর সেটাই সহজ পথ। শান্তির ধর্ম হিসেবে ইসলাম এবং নবী (সা.)-র চারিত্রিক সৌন্দর্য এই বইটির পরতে পরতে প্রকাশিত। নবী (সা.)-র জন্মস্থান আরব আগে কেমন ছিল? সেখানে ব্যাভিচার, বিশৃঙ্খল বর্বর জীবনযাত্রা ছিল মানুষের। কোনও পরিবারে কন্যাসন্তান জন্ম নিলে তাকে জীবন্ত কবর দেওয়া হত। আরবে সেই সময়কালের সার্বিক ছবি তুলে ধরতে একটি কবিতার উদ্ধৃতি দিয়েছেন লেখক — ‘ফ্যানাযুক্ত মদ, তাজা মাংস/ এক সাথে মানুষের মত্ততা জাগিয়ে দেয়। পাহাড়ের চূড়ায় ধ্যানরত সন্ন্যাসী যদি কোন নারীকে দেখতে পায়, তাহলে সে আশ্রম ত্যাগ করবে, তার মোহনীয় সৌন্দর্যের লোভে।’ এমন পরিবেশে থেকেও নবী কুসংস্কারে বিশ্বাসী মানুষকে উত্তরণের পথে নিয়ে গেছেন। কখনও নিজেকে ঈশ্বর বলেননি। বহু ঈশ্বরবাদকে দূরে সরিয়ে একেশ্বরবাদ ও তাঁর ঐশী বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন এক সুন্দর জীবন শৈলী রচনা করে।