কৌশিক সালুই, বীরভূম: স্বপ্ন আছে শিখরে ওঠার কিন্তু সব থেকে বড় বাধা হল পরিবারের আর্থিক অবস্থা। সেই প্রতিবন্ধকতাকে দূর করে এবার বীরভূমের ডেউচা পাচামির প্রত্যন্ত এলাকা দীঘল গ্রামের দুই স্কুলছাত্র রাজ্য পর্যায়ের কুস্তি প্রতিযোগিতা প্রথম ও তৃতীয় স্থান দখল করেছে। ওই দুই গ্রাম্য কুস্তিগীরের ইচ্ছা সরকারি বা ব্যক্তিগত কোনও সহায়তা পেলে কলকাতায় গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে জাতীয় স্তরে সেরা প্রদর্শন করার।
নুন আনতে পান্তা ফুরায় পরিবারের হাসিরুল শেখ। বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের অনুমোদিত কুস্তি প্রতিযোগিতা কেজি বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
বাড়ি বীরভূমের মহম্মদ বাজার থানার সেকেডা গ্রাম পঞ্চায়েতের দিঘল গ্রাম। এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে সে। তিন বোন ও এক ভাইয়ের সংসারে ভ্যানচালক বাবা নাজিম শেখ।
একমাত্র সেই রোজগারে কোনও ভাবে গ্রাসাচ্ছাদন হয় তাদের। অন্যদিকে একই গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাকিম সেখ। সে ওই প্রতিযোগিতার কুস্তির ৬৭ কেজি বিভাগে তৃতীয় স্থান দখল করেছে। স্থানীয় গণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। মুস্তাকিমের ছোটবেলাতেই বাবা মারা যায়। দাদা হাসান শেখ পাথর শিল্পাঞ্চলের মাটি কাটা মেশিন এর চালক। অভাবের সংসারে দাদাই অভিভাবক তার।
হাসিরুল এবং মুস্তাকিম সংসারের অনটন দূর করতে মুর্শিদাবাদে বছর খানেক আগে সেনাবাহিনীতে সুযোগ পাওয়ার প্রশিক্ষণের জন্য চলে যায়। সেখানেই সেই প্রশিক্ষকের ইচ্ছাতে কুস্তি খেলা শুরু। প্রথমবার সোদপুরে একটি প্রতিযোগিতায় তারা অংশগ্রহণ করলেও অনভিজ্ঞতার জন্য সেভাবে ছাপ পারেনি। কিন্তু সেখান থেকে খালি হাতে ফিরে এসে ওই দুজন মিলে গ্রামের মাঠে শুরু করে নিয়মিত চর্চা। ছিল না তাদের কোচ বা প্র্যাকটিস কোর্ট। এর মধ্যেই রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে যায় ওই দুই স্কুলছাত্র। ১৩ থেকে ১৬ মে কুস্তির নেতাজি সুভাষ স্টেট গেমস অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু প্রতিযোগিতায় ম্যাচ শুরুর আগে সমস্যায় পড়ে যায় ওই দুই প্রতিযোগী।
ম্যাচের রেফারি জানান জুতো এবং কুস্তির নির্দিষ্ট পোশাক ছাড়া খেলতে নামা যাবে না। তখনই কলকাতার এক কোচ অন্য প্রতিযোগীর জুতো এবং পোশাক দিয়ে তাদেরকে সহায়তা করে। আর দুজনেরই মনের অদম্য ইচ্ছার কাছে হার মানে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা। একজন হয় চাম্পিয়ন আর একজন তৃতীয় স্থান দখল করে তাদের নিজ নিজ বিভাগে। গ্রামে ফিরতেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং মহম্মদ বাজার থানার পুলিশ আধিকারিক তপাই বিশ্বাস ওই দুই কৃতি ছাত্রদেরকে সংবর্ধনা দেন।
প্রতিভাধর ওই দুই কুস্তিগীর হাসিরুল এবং মুস্তাকিম বলেন,” আমাদের অভাবের সংসার জাতীয় পর্যায়ে ভালো কিছু করতে গেলে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিতে হবে। আমাদের জেলাতে সেই পরিকাঠামো নেই। কিন্তু কলকাতায় থেকে সেই প্রশিক্ষণ নেওয়ার মতো আমাদের আর্থিক সচ্ছলতা নেই।
যদি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা কোনও সহৃদয় মানুষজন যদি আমাদেরকে সেই বিষয়ে সহায়তা করেন তাহলে আমরা সাফল্য অর্জন করব।
ইচ্ছা দেশের হয়ে খেলতে নেমে অলিম্পিক গেমসে পদক জয় করার”।