কৌশিক সালুই, বীরভূম: বাইরে গিয়ে সংখ্যালঘু ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য অন্যতম ভরসা হল ওয়াকফ বোর্ড পরিচালিত মুসলিম গার্লস হোস্টেল। বীরভূমের সিউড়িতে সেই হোস্টেলে জেলা ছাড়িয়ে রাজ্যের বিভিন্ন অংশ থেকে পড়াশোনার জন্য থাকেন পড়ুয়ারা। হোস্টেলের পরিকাঠামো থেকে পরিচালন ব্যবস্থা সব কিছুতেই খুশি ছাত্রীরা। বাড়ি থেকে দূরে থাকলেও কোনও সময়ই তাদের একাকীত্ব মনে হয় না।
প্রায় তিন দশক আগে পথ চলা শুরু সিউড়ি মুসলিম গার্লস হোস্টেলের। ওয়াকফ বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ১৯৯১ সালে মুসলিম ছাত্রীদের জন্য তৈরি হয় হোস্টেলটি। প্রত্যন্ত গ্রাম্য এলাকার মুসলিম ছাত্রীরা যাতে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারে তার জন্য এই হোস্টেল নির্মাণ করা হয়।
অতিরিক্ত জেলা শাসক, জেলার সংখ্যালঘু উন্নয়ন আধিকারিক এবং শহরের বিশিষ্টজন ও শিক্ষাবিদদের নিয়ে সেই হোস্টেল সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য পরিচালন কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমানে যা অব্যাহত। নামমাত্র খরচে এখানে থেকে পড়াশোনা করতে পারেন ছাত্রীরা।
হোস্টেল ফি হিসেবে ভর্তির সময় ৩৭০০ টাকা নেওয়া হয়, এরমধ্যে ১৫০০ টাকা ফেরত যোগ্য। বর্তমানে প্রতি মাসে দেড়শো টাকা নেওয়া হয় এই ছাড়া বিদ্যুতের বিল ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত ছাত্রীদের মাথাপিছু। এছাড়া ছাত্রীদের নিজেদের তত্ত্বাবধানে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে সেখানে তার খরচ কম বেশি ১০০০ টাকা। নিয়মিত পাঠক্রমে একাদশ শ্রেণি থেকে স্নাতকোত্তর, ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিএড ছাত্রীরা এখান থেকে পড়াশোনা করতে পারেন।
একমাত্র ডিসটেন্স বা ওপেন থেকে পড়াশোনা করলে সে ক্ষেত্রে পড়ুয়ারা হোস্টেলের সুবিধা পাবেন না। হোস্টেলের সিট সংখ্যা ৮৫ হলেও এখন ৩৫ জন ছাত্রী আছেন। বিগত দুবছর ধরে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির জন্য ছাত্রীসংখ্যা এখন কম। তাছাড়া এর আগে কার্যত সব সিট ভর্তি হয়ে যেত। তিনতলা বিশিষ্ট হোস্টেলে মোট ৩৬ টি রুম আছে এবং কুড়িটি স্নানাগার ও শৌচাগার আছে। লাইব্রেরির জন্য তহবিল বরাদ্দ হয়ে গেছে বর্তমানে। খুব দ্রুত সে কাজ শেষ হবে বলে জানা গিয়েছে।
পূর্ব বর্ধমান জেলার ভেদিয়ার ব্রাহ্মনডিহির বাসিন্দা আজমিরা খাতুন সে বিদ্যাসাগর কলেজের আরবি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী, বাঁকুড়ার বড়জোড়ার বাসিন্দা নাইস খাতুন, সেও আরবি অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী এবং রামপুরহাটের হাসনের বাসিন্দা শাইনুর ইয়াসমিন, সে বিএড-এর ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী। তাদের কথায়, ‘হোস্টেলের পরিকাঠামো খুবই সুন্দর। যেকোনও সমস্যা হলে তার সমাধান সঙ্গে সঙ্গেই হয়ে যায়। বাড়ির বাইরে থাকলেও কোনও ভাবেই আমাদের কোন কিছু সমস্যা হয় না এবং এখানে থেকে খুব ভালোভাবে আমরা পড়াশোনা করতে পারছি’।
সিউড়ি শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তি ইয়াসমিন আক্তার বলেন,’ একটা সময় মুসলিম সমাজের মহিলারা শিক্ষা-দীক্ষায় বেশ পিছিয়ে ছিল। এই গার্লস হোস্টেল এর ফলে গ্রামাঞ্চল এলাকার মেয়েরা এখানে থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারছে”।
গার্লস হোস্টেলের সুপার সাকিনা খাতুন বলেন,’নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে ছাত্রীরা এখানে থেকে পড়াশোনা করে। এছাড়া বিগত কয়েক বছরে এখানে পরিকাঠামো বেশ উন্নত হয়েছে। পরিস্রুত পানীয় জলের জন্য প্রয়োজনীয় মেশিন বসানো হয়েছে। এখানে থেকে খুব কম খরচে পড়াশোনা করতে পারে ছাত্রীরা”।