নাজির হোসেন লস্কর, মগরাহাট: দিন পনেরো আগে বিকেলে তাঁর জীবনে নেমে আসে অন্ধকার৷ ঈদের পরদিন খুন হন তাঁর স্বামী মোজাম ওরফে মোজাম্মেল ঢালি৷ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত মানোয়ার মোল্লাসহ তার ড্রাইভারকে ভুবনেশ্বর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ এখন তারা পুলিশ হেফাজতে৷
পুলিশের কাজে খুশি হলেও শোকের মধ্যেই তাঁর চিন্তা, দুই মেয়েকে এবার কী খাওয়াবেন, কী পরাবেন, লেখাপড়া–বা কীভাবে শেখাবেন? বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলেও বাকি দুই মেয়েকে নিয়ে এখন অসহায় পড়েছেন মোজাম্মেলের স্ত্রী মানোয়ারা বিবি৷
বছর ২০ কুড়ি আগে জয়নগরের পদ্মেরহাট এলাকার অষ্টম শ্রেণি পাশ মানোয়ারা বিবির বিয়ে হয় মগরাহাটের গোকর্ণী পঞ্চায়েতের রামনগরের বাসিন্দা মোজাম্মেল ঢালির সঙ্গে৷
তিন কন্যাসন্তান, স্বামী, শ্বশুর–শাশুড়ির সঙ্গে মানোয়ারা বিবির চলছিল সুখের সংসার৷ ঈদের আনন্দের রেশ তখনও কাটেনি৷ পরদিনই বিকেলে খবর পান তাঁর স্বামীকে পাশের এলাকা যুগদিয়ার পশ্চিমপাড়ায় গুলি করেছে৷ আকাশ ভেঙে পড়ে মানোয়ারা বিবির মাথায়৷ খানিক পরেই মৃত্যু খবর৷ নিঃস্ব হয়ে পড়ে গোটা পরিবার।
মানোয়ারা বিবি বলেন, সংসারের পুরো দায়িত্বই ছিল স্বামীর৷ ভাড়া নেওয়া দোকানে আলু–পিঁয়াজ বিক্রি করত স্বামী৷ তিন মেয়ের মধ্যে বড়টার বিয়ে হয়ে গেছে৷ বছর দেড়েকের মাহিরা ঢালি ও বছর দশেকের মোহিনী ঢালিকে নিয়ে পথে বসার উপক্রম৷ সঙ্গে রয়েছে শ্বশুর–শাশুড়ি৷ মেজো মেয়ের চোখের সমস্যা, শাশুড়িও চোখে দেখতে পান না৷ সবাই এখন খাবে কী? এদের পড়াশুনা–বা হবে কী করে? বলতে বলতে মানোয়ারা আর চোখ পানি আটকাতে পারেননি৷
নিজেকে খানিক সামলে ছলছলে চোখ নিয়ে তিনি বলেন, সরকার আমাদের না দেখলে কে আর দেখবে?
মানবিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমার আবেদন, দুই মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে যদি মুখ্যমন্ত্রী একটা স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা করে দেন তাহলে আর আমাদের পথে বসতে হয় না। সদ্য আব্বা চলে যাওয়া দুই মেয়ের পড়াশুনা ও তাদের বেড়ে ওঠা অনেকটা সহজ হয়।
অন্যদিকে, পুলিশের ভূমিকায় খুশি মোজাম্মেলের স্ত্রী৷ কোলে ছোট্ট মেয়ের দিকে তাকিয়ে মানোয়ারা বলেন, যারা এদের আব্বাকে খুন করেছে তারা যেন যেন চরম শাস্তি পায়৷ পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ফাঁসি বা জেল থেকে আর বের হতে না পারে তার ব্যবস্থা করুক পুলিশ৷
উল্লেখ্য, যুগদিয়ার হত্যা ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগে মগরাহাটের আমড়াতলা পঞ্চায়েতের বটতলা এলাকায় এক সিভিক ভলেন্টিয়ারসহ দুজনের হত্যার ঘটনায় দুই পরিবারকে আর্থিক সাহায্য ও চাকরি দিয়েছে রাজ্য সরকার।
এ বিষয়ে স্থানীয় বিডিও সেখ আবদুল্লাহ জানান, মোজাম্মেলের পরিবার তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন৷ কিছু খাদ্যসামগ্রী তৎক্ষণাৎ তাঁদের সাহায্য করা হয়েছে৷ তাঁর দিক থেকে যথাসাধ্য সাহায্যের চেষ্টা করবেন বলে মোজাম্মেলের স্ত্রী মানোয়ারাকে জানিয়েছেন বিডিও৷