পুবের কলম প্রতিবেদক: ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’। আন্দামান সাগরে তৈরি ঘূর্ণাবর্ত পরিণত হয়েছে নিম্নচাপে। রবিবারের মধ্যে এই নিম্নচাপ শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। নিম্নচাপ শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আন্দামান সাগরের পর দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এবং মধ্য বঙ্গোপসাগর পেরিয়ে উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে আসতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’। এর পর নিম্নচাপ গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। মঙ্গলবার ‘অশনি’ এগোবে ওড়িশা উপকূলের দিকে। এর কিছুটা প্রভাব পড়বে বঙ্গে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নবান্নের সঙ্গে একযোগে প্রস্তুত থাকছে কলকাতা পুরসভা। তার জন্য সমস্ত প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে, শনিবার এমনটাই জানান কলকাতা পুরসভার মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সোমবার থেকে উপকূলীয় জেলাগুলোতে বৃষ্টি শুরু হবে। মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ভারী বৃষ্টির সর্তকতা রয়েছে। উপকূলের জেলা এবং ওড়িশা সংলগ্ন জেলাগুলিতে ঝোড়ো হাওয়ার সর্তকতা। আগামী ৪৮ ঘণ্টা কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় বজ্রবিদ্যুতসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ঘণ্টায় ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে হাওয়া। একই পূর্বাভাস রয়েছে কলকাতার জন্যও। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে সব রকম প্রস্তুতিই সেরে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেয়র।
কলকাতা পুরসভার নিকাশি বিভাগের এক আধিকারিক জানান, শহরে ৩৫০ টি অতিরিক্ত পাম্প তৈরি রাখা হচ্ছে। বরো একজিকিউটিভদের সঙ্গে নিকাশি বিভাগের সমন্বয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। একাধিক এলাকায় ম্যানহোল খুলে জল নামানোর চেষ্টা চলবে। দুর্যোগের দিন চারটি স্থায়ী পাম্পিং স্টেশন এবং সমস্ত পকেট লগ খোলা থাকবে ২৪ ঘন্টা। দ্রুততার সঙ্গে কাজ সম্পন্ন করার জন্য ওইদিন পাম্পিং স্টেশন ও পকেট লগের কর্মচারীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন কলকাতা পুরসভার উচ্চ পদস্থ অফিসাররা।
অন্যদিকে মৌসম ভবনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি হতে পারে দুই মেদিনীপুর, দুই বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ায়।
আপাতত দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা। পূর্ব মেদিনীপুর উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। বজ্রবিদ্যুৎ সহ বিক্ষিপ্তভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি চলবে শনিবার পর্যন্ত। এরপর কমবে বৃষ্টির পরিমাণ ও ব্যাপকতা। ৮ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টি চলবে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও। মঙ্গলবার থেকে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
দুর্যোগ সামাল দিতে ইতিমধ্যেই দক্ষিণবঙ্গের জেলাশাসকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন মুখ্যসচিব হরেকৃষ্ণ দ্বিবেদী। আগাম সমস্ত তৈরির রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নবান্নের তরফে বলা হয়েছে, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় দুর্বল বাঁধগুলিকে মেরামত করতে হবে। উপকূলবর্তী জেলাগুলির কন্ট্রোলরুমকে সক্রিয় করার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। সেইসঙ্গে নবান্ন বলেছে, পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রয়োজনে নিচু এলাকা থেকে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে আসতে হবে। বিপর্যয় মোকাবিলা দল, এনডিআরএফ-কেও প্রস্তুত থাকার কথা বলা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে।