পুবের কলম প্রতিবেদক: হাঁসখালি গণধর্ষণ ও ভাদু শেখ খুনে সিবিআইয়ের রিপোর্ট জমা পড়ল হাইকোর্টে। সোমবার হাঁসখালি গণধর্ষণকাণ্ড ও বীরভূমের বগটুই-এর ভাদু শেখ খুনের স্টেটাস রিপোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চে জমা দিল সিবিআই। একই সঙ্গে বগটুই গ্রামের অগ্নিসংযোগের দ্বিতীয় স্টেটাস রিপোর্ট তারা জমা করল হাইকোর্টে ।
এদিকে বিভিন্ন জেলার পাঁচ ধর্ষণ-কাণ্ডের তদন্তে রাজ্য পুলিশের উপরই আস্থা রাখল কলকাতা হাইকোর্ট।
হাঁসখালী গণধর্ষণকাণ্ডে তদন্তের স্টেটাস রিপোর্ট আদালতে জমা দিল সিবিআই। ফরেন্সিকের কিছু অংশ বাকি রয়েছে। সেটার জন্য আদালতের কাছে কিছুটা সময় চাইলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসাররা।
একই সঙ্গে হাঁসখালী কাণ্ডে নির্যাতিতার পরিচয় ফাঁস করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির একজনের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপের আবেদন করা হয়েছে। এই বিষয়ে হাইকোর্ট স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, নির্যাতিতার পরিচয় কোনওভাবেই প্রকাশ্যে আনা যাবে না।
এ ছাড়া মামলাটি স্থানান্তরিত করারও আবেদন করা হয়েছে। মামলাটি নদিয়া থেকে কলকাতায় স্থানান্তরীত করার আবেদন করা হয়েছে। ২০ মে এই দুটো মামলায় একত্র ভাবে শুনানি হবে।
সিবিআইয়ের আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য জানান, চার্জশিট ফাইলের আগে রিপোর্ট কোনও পক্ষকে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই সিল বন্ধ খামে রিপোর্ট জমা করা হয়েছে। একমাত্র আদালতই সেই রিপোর্ট দেখতে পারে। তিনি আরও জানান, কেন্দ্রীয় ফরেনসিক রিপোর্ট আসার জন্য আরও ২ সপ্তাহ সময় প্রয়োজন।
আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি এই মামলা নদিয়া জেলা আদালত থেকে অন্যত্র স্থানান্তরের দাবি জানান। তাঁর মতে, আদালতের মামলা স্থানান্তরের ক্ষমতা আছে।
এরই মধ্যে হাঁসখালি ধর্ষণ-কাণ্ডে নাবালিকার নাম পরিচয় প্রকাশ্যে আনায় বিজেপির সত্যানুসন্ধান কমিটির এক সদস্যার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ চেয়ে মামলা করলেন সুমন সেনগুপ্ত নামে এক আইনজীবী।
প্রধান বিচারপতির এজলাসে ওই আইনজীবী এই মর্মে আবেদন করেন। একইসঙ্গে তিনি জানান, হাইকোর্টের নির্দেশে হাঁসখালি-কাণ্ডের তদন্ত করছে। সেখানে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পৃথকভাবে তদন্তকারী দল পাঠিয়েছে। এতে সিবিআই তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে।
অপর আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়ও জানান, হাঁসখালিতে নির্যাতিতার নাম প্রকাশ করা হয়েছে। ওই নাবালিকা তফসিলি সম্প্রদায়ভুক্ত। এক্ষেত্রে সিবিআইয়ের এসসি-এসটি অ্যাট্রোসিটিজ অ্যাক্টে মামলা করা উচিত ছিল।
সিবিআই রিপোর্টে তার কোনও উল্লেখ নেই। সিবিআই আইনজীবী জানান, পরবর্তী সময়ে সিবিআই নিশ্চয়ই সেটা ক্ষতিয়ে দেখবে। প্রধান বিচারপতি জানান, নির্যাতিতার নাম কোনও ভাবেই প্রকাশ করা যাবে না।
এদিনই বসিরহাটে মাটিয়ার ধর্ষণ মামলার তদন্ত রিপোর্টও জমা পড়েছে আদালতে। হাইকোর্টের নির্দেশ রাজ্যের সমস্ত গ্রামেগঞ্জে সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে রাজ্য সরকারকে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেশ করতে হবে। মাটিয়া মামলার সূত্রেই আদালতে অভিযোগ করা হয়েছে রাজ্যার বিভিন্ন জেলায় গ্রামেগঞ্জে সন্ধ্যার পর অধিকাংশ রাস্তায় বা এলাকায় বিদ্যুৎ থাকে না।
অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে দুষ্কৃতীরা অনেক সময় মেয়েদের উপর অত্যাচার চালায় বলে অভিযোগ।
এদিন এই মামলায় বিজেপির তরফে আইনজীবী সুস্মিতা দত্ত জানান, ঘটনার দিন মাটিয়ার রাস্তায় আলো ছিল না বলেই ওই ঘটনা ঘটেছে।
রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের আইনজীবী জানান, গ্রামেগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়টি দেখভাল করে স্থানীয় পঞ্চায়েত। গ্রামেগঞ্জে রাস্তার আলো বন্ধ থাকা নিয়ে রাজ্য সরকারকে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেশ করতে হবে বলে প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দেন।
অন্যদিকে, রাজ্যে সম্প্রতি পাঁচ ধর্ষণ-কাণ্ডের তদন্তে এখনও রাজ্য পুলিসের উপরই আস্থা রাখল কলকাতা হাইকোর্ট। শান্তিনিকেতন, পিংলা, নামখানা, নেতরা এবং ময়নাগুড়ির ধর্ষণ মামলা নিয়ে সোমবারও শুনানি চলে কলকাতা হাইকোর্টে। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে এদিন পাঁচ তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট পেশ করা হয় রাজ্য সরকারের তরফে। শুনানিতে হাইকোর্ট রাজ্য পুলিসের তদন্তেই ভরসা রেখেছে। পরবর্তী শুনানি ৪ মে।