পারভেজ হোসেন, দিনহাটা: ঝড়ের তাণ্ডব কোচবিহার জেলাজুড়ে। ঝড়ের সঙ্গে হল শিলা বৃষ্টি। এই ঝড়ে প্রাণ গেল দুজনের। আহত হয়েছে বহু মানুষ। ভেঙেছে বাড়িঘর। আশ্রয়হীন কয়েক হাজার মানুষ। তাদের আপাতত শুকটাবারি জুনিয়র হাই মাদ্রাসায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। আহতরা কোচবিহার এম জে এন হাসপাতালে চিকৎসাধীন। এলাকা পরিদর্শনে জেলা পুলিশের আধিকারিকদের পাশাপশি উপস্থিত হয়েছেন রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, কোচবিহার জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান গীরিন্দ্র নাথ বর্মন।
রবিবার সন্ধ্যায় প্রায় ২০ মিনিট ধরে চলা এই ঝড় কোচবিহারের একাধিক অঞ্চলের মধ্যে তার ধ্বংসলীলা চালায়। এই ঝড়ের তান্ডব এতটাই তীব্র ছিল যে জেলাজুড়ে ১৫০০ এর বেশি বাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। উপরে গেছে মোটা মোটা গাছ, ভেঙে গেছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। পাশাপাশি শিলা বৃষ্টির তাণ্ডবে ধ্বংস হয়েছে বিঘার পর বিঘা জমির ফসল। ঝড়ের তান্ডবে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গ্রামগুলি।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকের শুকটাবারি এলাকার বেশ কিছু গ্রাম। তার মধ্যে শুকটাবাড়ি, মোয়ামারি, দুধেরকুঠি, টাপুরহাট ও পশ্চিম ঘুঘুমারীর বিস্তীর্ণ এলাকা। সেখানেই ৩০০ এর অধিক বাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। কোচবিহার-১ ব্লকের মোয়ামারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বড় আঠারোকোটা গ্রামে ঝড়ের সময় গাছ পড়ে ও গলায় টিনের আঘাত লেগে মৃত্যু হয় ১৬ বছরের কিশোর জাহাঙ্গীর আলমের। অপরদিকে ঘুঘুমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের পালপাড়া এলাকায় দেবদাস পাল নামে এক ব্যক্তির উপর গাছ পড়ায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
কোচবিহার শহর, কোচবিহার-২ ব্লক, মাথাভাঙা ২ ব্লকেও ধ্বংসলীলা চালায় কালবৈশাখী ঝড়। এছাড়াও দিনহাটা ২ নং ব্লকের নাজিরহাট, বুড়িরহাট, সাহেবগঞ্জ, দিনহাটা ১ নং ব্লকের শৈলমারী, ভেতাগুরি প্রভৃতি এলাকায় মৃত্যুর খবর পাওয়া না গেলেও অনেক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। অপরদিকে মাথাভাঙা ২ ব্লকের রুইডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা ঘোকসাডাঙ্গা , লতাপাতা গ্রাম পঞ্চায়েতের দ্বারিকামারি, পুঁটিমারি এলাকায় বিশালাকারের শিলা বৃষ্টির ফলে অনেক টিনের চালার বাড়ি ও কৃষিজ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
রাজু রহমান নামের যুবক জানান, কাল সন্ধ্যায় হঠাৎ প্রচন্ড ঝড় শুরু হয়। আমরা প্রাণে বেচে গেছি এটাই ভাগ্যের। তিনি আরো বলেন রান্না করে খাওয়ার মত পরিস্থিতি নেই। গ্রামের সবাই আমরা কাল থেকে না খেয়ে আছি।
এই ঝড়ের ফলে কার্যত ভিটেমাটি হারা হয়ে আছে কয়েক হাজার মানুষ। অভুক্ত অবস্থায় তারা মাথায় হাত দিয়ে বসে রয়েছে বাড়ির সামনে। স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস ও তৃনমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে শুকটাবারি জুনিয়ার হাই মাদ্রাসায় রিলিফ ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর সেই মাদ্রাসায় বেশ কিছু মানুষকে এনে রাখা হয়েছে। তাছাড়া সেখান থেকে রান্না করা ও শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে দুর্গতদের।
এ বিষয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ব্লক সভাপতি মঞ্জুদার রহমান জানিয়েছেন, যতদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হচ্ছে ততদিন আশ্রয়হীন লোকেদের এই মাদ্রাসায় থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। যদিও এখনও কতটা পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেই বিষয়ে কিছু জানা যায়নি জেলা প্রশাসনের তরফে।