মাওলানা আবদুল মান্নান
ইসলামের দৃষ্টিতে রোযা হল এমন এক ইবাদাত– যা রোযাদারকে সমস্ত দিক থেকে পরিশুদ্ধ করে– আর আমালিয়াতের জগতে সৃষ্টি করে এক নতুন উদ্যম ও প্রেরণা। তাই রমযান মাসকে অভিহিত করা হয় মুসলমানের জীবনে সওয়াবের নব বসন্ত নামে। এই মওসুমে তারাই ভাগ্যবান যারা আল্লাহ্ রহমত– মাগফিরাত ও নাজাতে নিজেদের পুণ্যের ঝুলিকে ভরে নিতে পারলো। আর যারা পারল না তারা সীমাহীন দুর্ভাগ্যের অধিকারী। তাদের দুর্ভাগ্য সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে– একদা রমযান মাসে হযরত জিবরাঈল আ. নবী করীম সা.-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁকে রোযার জন্য আল্লাহ্পাক যে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন তা শোনান। অতঃপর তিনি বলেন ঃ ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সা.! যারা রমযানের মাস পেল অথচ রোযা রাখল না— আমি তাদের জন্য ধ্বংস কামনা করছি। একথা বলে তিনি রোযা পরিত্যাগকারীদের জন্য বদ্দোয়া করেন। আর তা শ্রবণ করে নবী করিম সা. বলেন ঃ আমীন! অর্থাৎ আল্লাহ্ কবুল করুন।’ (হাদীসে কুদসী)
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়– যে রমযান মাসের রোযার কি অসীম গুরুত্ব আল্লাহ্র দরবারে রয়েছে।
তেমনি রোযাদারের জন্য আল্লাহ্ পাক যে ‘পুরস্কার’ ঘোষণা করেছেন– তা শ্রবণ করার মুহূর্তেই মানুষকে ভোগে বিতৃষ্ণ– ত্যাগে উদ্বুদ্ধ এবং আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান করে তোলে।
সওয়াবের আধিক্যঃ রমযান মাসে রোযাদারের প্রত্যেকটি আমলের জন্য সওয়াবের আধিক্য অত্যাধিক। রমযানে যে ব্যক্তি রোযা রাখে সে অশেষ পুণ্যের অধিকারী হয়।
নবী করিম সা. বলেন ঃ ‘রমযান মাসে নফল ইবাদাতের সওয়াব ফরয ইবাদাতের সমতুল্য হয়।’
আর রমযান মাসে যে-কোনও পুণ্য অনেক অনেক গুণ বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ্ বলেন ঃ ‘রোযা একমাত্র আমার জন্য।’ সুতরাং– আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন নিজেই জানেন রোযার সওয়াব বান্দাহ্কে তিনি কতগুণ দেবেন।
কেননা– রোযা বা সিয়াম নাফ্স (প্রবৃত্তি)-কে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখে । শুধু পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকাই নয়– রোযাদারের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ– শ্রবণ– দর্শন ও চিন্তা -ভাবনা প্রাচীরের মতো রোযাদারকে বেষ্টন করে রাখে ।