মাওলানা আবদুল মান্নান : আমরা যেহেতু রক্ত-মাংসের দুর্বল মানুষ, তাই সব সময়েই আমরা আমাদের কর্তব্য ঠিকঠাকভাবে পালন করতে পারি না। আমাদের আচার-আচরণ, ধার্মিকতা ও ইবাদাত, জটিল ও উদ্দাম ব্যস্ততায় ভরা দৈনন্দিন জীবনে ‘রিয়া’ বা আত্ম প্রদর্শনের (ভণ্ডামি) তলায় চাপা পড়ে যায় এবং তা অনেক সময়ে আমাদের সালাত, দান, খয়রাত, হজ ও যাকাত প্রদানে প্রকট হয়ে পড়ে। সে ইবাদাত আল্লাহর উদ্দেশ্যে হয় না যা আমরা লোকদেখানোর জন্য করে থাকি। কিন্তু রোযা বা সিয়াম পালন হচ্ছে এমন ইবাদাত যাতে রিয়া বা লোকদেখানোর কোনও প্রবণতা বা অবকাশ থাকে না। রোযা কেবল মাত্র আল্লাহর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হয়।
সিয়ামের জন্য চাই মানসিক প্রস্তুতিঃ এটি সত্য যে, মানসিক প্রস্তুতি অনেক কিছুকে সহজ করে দেয়। কোনও কিছুর সাফল্যের প্রথম সোপান হল প্রস্তুতি। একজন মু’মিন তার দুনিয়াবী কাজের তুলনায় দ্বীনের কাজকে বেশি প্রাধান্য দেয়। সুতরাং, রমযান মাস আসার পূর্বেই রোযার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি থাকতে হবে এবং দৃঢ় সংকল্প নিতে হবে যে, আমি অবশ্যই রোযা পালন করব।
রোযা লোভ-লালসা থেকে মুক্ত করেঃ লোভ-লালসা মানুষকে ধ্বংস করে। সমাজে যত ধরনের বৈষম্য তা মানুষের লোভের প্রতিফলন। যিনি রোযা রাখেন তিনি কখনও হারাম জিনিসের প্রতি লোভ রাখতে পারেন না, বা অন্যের সম্পদের প্রতি দৃষ্টিপাতও করেন না।
সিয়াম বা রোযার বৈশিষ্ট্যই হল, এতে ইচ্ছা ও সঙ্কল্পে দৃঢ়তা সৃষ্টি হয়, চারিত্রিক মাহাত্ম্য অর্জিত হয়, শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায় এবং সর্বোপরি তা মুসলিম উম্মহর একতাবদ্ধ হওয়ার এক বাস্তব নিদর্শন।
পুরস্কারঃ সিয়ামের পুরস্কার হল জান্নাত। মহান আল্লাহ্তায়ালা ঘোষণা করেছেন : ‘হে প্রশান্ত চিত্ত। তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট ফিরে এসো সন্তুষ্টি ও সন্তোষভাজন হয়ে, আমার দাসেদের অন্তর্ভুক্ত হও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (সূরা ফাজর)
নবী করিম সা. বলেছেন : ‘তোমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করবে, রমযান মাসের রোযা রাখবে, সম্পদের যাকাত আদায় করবে, সুশাসকের আনুগত্য করবে, তা হলেই তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (আলমগীরী)