পুবের কলম প্রতিবেদক, নদিয়া: নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের মাটিয়ারি গ্রামের বাসিন্দা রহতন বিবি মারা গেছেন। কিন্তু দুই কন্যা বৈবাহিক সূত্রে পড়শি বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা। রোহতনের শেষ ইচ্ছা ছিল তাঁর দাফন –কাফনের আগে তাঁর মেয়েরা যেন উপস্থিত থাকে। সেই মতো খবর দেওয়া হয়েছিল দুই মেয়েকেই। কিন্তু বাদ সাধল কাঁটাতারের বেড়া।
তবে বিএসএফ ও বিজিবি-র তৎপরতায় মাকে শেষ দেখা দেখতে পারলেন বাংলাদেশের ওই দুই মেয়ে। বিএসএফের উদ্যোগে বৃদ্ধার মৃতদেহ জিরো পয়েন্টে নিয়ে আসা হয়। সেখানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের উপস্থিতিতে নিয়ে আসা হয় দুই মেয়েকে। মায়ের মৃতদেহ দেখেই তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকলেন কৃষ্ণগঞ্জের মাটিয়ারি গ্রামের বাসিন্দারা।
বিএসএফের এই মানবিক উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সকলে।
বিএসএফের জনসংযোগ আধিকারিক তথা ডিআইজি এসএস গুলেরিয়া সোমবার বলেন, বিএসএফ সীমান্তে সর্বদা নজর রেখে চলেছে। পাশাপাশি আমরা মানুষের আবেগ ও মানবিক মূল্যবোধকে সমান গুরুত্ব দিই।
জানা গিয়েছে, নদিয়ার সীমান্তবর্তী গ্রাম মাটিয়ারিতে ছেলে সুকুর মণ্ডলের সঙ্গে থাকতেন বৃদ্ধা রোহতন বিবি। তাঁর দুই মেয়ে বিয়ের পর বাংলাদেশে চলে যান। ফোনে যোগাযোগ থাকলেও নিয়মবিধির গেড়োতে সাক্ষাৎ সেভাবে হত না। বৃদ্ধা বেশ কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। রবিবার তাঁর মৃত্যু হয়। মায়ের মৃত্যুর খবর পেতেই শেষ দেখা দেখার জন্য দুই মেয়ের মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। কিন্তু, বাধা হয়ে দাঁড়ায় কাঁটাতার।
নিরুপায় সুকুর বার্নপুর বর্ডার আউটপোস্টের ৫৪ নম্বর ব্যাটালিয়নের কামান্ডারকে বিষয়টি জানান। অনুরোধ করেন, তাঁর বোনেরা যদি মাকে শেষ দেখা দেখতে পারেন, তবে তাঁরা খুবই খুশি হবেন।
মানবতার ধর্মকে সামনে রেখেই তৎপর হয় বিএসএফ। বেড়াজালের নিয়মের ঊর্ধ্বে প্রাধান্য দেওয়া হয় মানবিক মূল্যবোধকে। সময় নষ্ট না করে কমান্ডিং অফিসার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের(বিজিবি) সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মানবিক মূল্যবোধ ও পারস্পরিক সহযোগিতার জায়গা থেকে এগিয়ে আসে বিজিবিও। বিজিবি রোহতন বিবির দুই মেয়েকে সীমান্তের কাছে জিরো পয়েন্টে নিয়ে আসে। সেখানে বিএসএফের তরফে ওই বৃদ্ধার মৃতদেহ নিয়ে আসা হয়। মাকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন দুই মেয়ে।
বিএসএস ও বিজেবির এই মানবিক কাজের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বৃদ্ধার দুই মেয়ে ও ছেলে।
রোহতন বিবির বড় মেয়ে রাজিনা চোখের জল মুছতে মুছতে বলে দিলেন, ‘‘আমার মা দেখিয়ে দিয়ে গেল, দু’দেশ কত আপন। বিএসএফ এবং বিজিবিকে ধন্যবাদ। বিএসএফের মানবিকতার কারণেই মাকে শেষ দেখা দেখতে পেয়েছি। মাকে শেষবার দেখতে না পেলে সারাজীবন নিজেদের ক্ষমা করতে পারতাম না।