ভিক্ষু বাংলার বিশিষ্ট বৌদ্ধ ধর্মগুরু। তিনি টালিগঞ্জের বৌদ্ধ সমিতির কর্ণধার। রমযান আর রোযা সম্পর্কে তাঁর অনুভূতির কথা জানালেন। শুনলেন প্রদীপ মজুমদার
রমযান মাস ইসলামের পবিত্রতম মাস। এই মাসে পবিত্র কুরআন শরীফ নাজিল হয়েছিল। এটি একটি বরকতময় পূণ্য মাস। এই মাসে রোযা রেখে মহান আল্লাহ’র শরণাপন্ন হলে সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভ হয়। রোযা বা উপবাসে থাকা শুধু ইসলাম নয়, প্রায় সব ধর্মেই রয়েছে। যেমন আমাদের বৌদ্ধ ধর্মে বিনয় পিটকের নিয়ম মেনে চললে দুপুর ১২টা থেকে পরের দিন ভোর পর্যন্ত ভিক্ষুদের কোনও ভারি খাদ্যগ্রহণ করা চলবে না। এছাড়া সাধারণ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা আষাঢ় পূর্ণিমা থেকে আশ্বিন পূর্ণিমা অবধি আত্মসংযমের জন্য উপবাস করে থাকেন।
তবে মুসলিম ভাইবোনেরা অত্যন্ত কঠোর নিয়মে সংযম বা রোযা পালন করে থাকেন। সারা দিন খাদ্য-পানীয় পরিহার করেছেন তাঁদের কষ্টটা অনুভব করা যায়, যাঁরা অর্থাভাবে, খাদ্যাভাবে অনাহারে থাকতে বাধ্য হন। এরফলে সেই অভাবগ্রস্থ মানুষদের প্রতি করুণা জাগ্রত হয়, যা থেকে তাদের সহযোগিতার হাতও প্রসারিত হয়। আমার মনে হয় তার থেকেই জাকাত, সদগা দেওয়ার নিয়ম। যাই হোক, মুসলিম ভাই-বোনেরা এই গোটা রমযান মাস জুড়ে যে ভাবে ভোর থেকে সূর্যাস্ত অবধি আহার-পানীয় ত্যাগ করেও নিত্যদিনের কাজকর্ম চালিয়ে যান, তা দেখে তাঁদের সংযমের নিষ্ঠাকেই প্রকাশ করে। আবার রোযা ভাঙার জন্য যে ইফতার হয়, সেখানেও কেউ একা নন, প্রতিবেশি দুস্থদের ইফতার দিয়ে তবেই স্বজন ও বন্ধুদের নিয়ে ইফতার করা হয়। এতে এক মহামিলনের ছবিটাই ফুটে ওঠে।
আগে আমরা দেখেছি, রমযানের মধ্যেই বৌদ্ধ পূর্ণিমা পড়তে। তখন ওইদিন আমরা টালিগঞ্জের বৌদ্ধ সমিতিতে মুসলিম ভাই বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানিয়ে ইফতারের ব্যবস্থা করেছি। এবার বৌদ্ধপূর্ণিমা ১৬ মে। তখন রমযান শেষ হয়ে যাবে। আগামী ১৪ এপ্রিল বাবাসাহেব আম্বেদকরের জন্মদিবস। ওইদিন আমরা একটি সর্বধর্ম সমন্বয়ের আলোচনার সঙ্গে মুসলিমদের নিয়ে ইফতার মজলিসেরও আয়োজন করব টালিগঞ্জ বৌদ্ধ সমিতিতে। আমরা বাংলার বৌদ্ধ সমাজের তরফ থেকে সমস্ত মুসলিম ভাই-বোনকে বরকতময় মাস রমযানের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।