পুবের কলম প্রতিবেদক: সন্তান প্রসবের পর সাধারণত মাস ছয়েক পিঠে ও কোমরে ব্যথা থাকতে পারে। তারপরে এই ব্যথা থাকলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। অনেকে এই ব্যথার জন্য সিজারের সময় দেওয়া ইঞ্জেকশনকে দায়ী করে চুপচাপ থাকেন। যদিও বিষয়টা তা নয়। কেন হয় এই ব্যথা? এ বিষয়ে জানাচ্ছেন কনসালট্যান্ট পেন অ্যান্ড রিহ্যাব ফিজিশিয়ান ডা. অম্বর কোনার।
সন্তান প্রসবের পর অনেক মা ডাক্তারের চেম্বারে যান কোমরে ব্যথার সমস্যা নিয়ে। এই ব্যথা হতে পারে হাঁটাচলা করার সময়, বাচ্চা কোলে নিলে, ঝুঁকে কোনও কাজ করলে। আবার বিশ্রাম নিলে, কিছু হালকা ব্যায়াম করলে কিংবা ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করলে এই ব্যথা দূর হয়ে যায়। তারপরেও অনেকেরই ধারণা সিজারিয়ান সেকশনে বাচ্চা প্রসবের আগে কোমরে দেওয়া স্পাইনাল ইঞ্জেকশনের জন্য এই ব্যথা হয়। আর সারা জীবন এই ব্যথা ভোগাতে পারে। তাই বাচ্চা অনেক বড় হয়ে যাওয়ার পরেও কোমরে ব্যথা হলে ওই ইঞ্জেকশনের জন্য হচ্ছে ধরে নিয়ে তা সহ্য করে যান। ফলে সমস্যা বাড়তে থাকে। অসুখ ধরতে দেরি হয়ে যায়। চিকিৎসাও হয়ে ওঠে সময়সাপেক্ষ। প্রশ্ন হল, বাচ্চা হওয়ার পর,
বিশেষত সিজার করে ডেলিভারির পর কেন হয় কোমরে ব্যথা?
নানা কারণে এই ব্যথা হতে পারে। যেমন,হরমোনের তারতম্য প্রেগন্যান্সির সময় শরীরে রিলাক্সিন ও ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ বেশি থাকে যা জয়েন্টগুলো নমনীয় রাখে যাতে সুষ্ঠু ভাবে শিশু প্রসব হয়। প্রসবের পরে আবার এই হরমোনের পরিমাণ কমে যায়। ফলে জয়েন্টগুলো আবার প্রেগন্যান্সির আগের অবস্থায় ফিরে আসে। জয়েন্ট ও আশপাশের টিস্যু স্বাভাবিক হতে ৬-৮ সপ্তাহ সময় নেয়। হরমোনের মাত্রা এভাবে কমার জন্য পিঠে বা কোমরে ব্যথা ছাড়াও ক্লান্তি, ও কাজ করতে সমস্যা হতে পারে।
কোমর ও লিগামেন্টের ওভারস্ট্রেচিং
প্রেগন্যান্সির সময় কোমর ও সংশ্লিষ্ট লিগামন্টের অতিরিক্ত প্রসারণ থেকে ব্যথা হতে পারে।
শারীরিক পরিবর্তন
প্রেগন্যান্সির সময় যে কোনও মহিলার শরীরে নানারকম পরিবর্তন দেখা দেয়। তারই ফলস্বরূপ সেকেন্ড ট্রাইমেস্টার (১৩-২৭ সপ্তাহ) থেকেই কোমরে ও পিঠে ব্যথা হতে পারে। তা চলতে পারে বাচ্চা হওয়ার কয়েক মাস পরে পর্যন্ত।
ওজন বৃদ্ধি
প্রেগন্যান্সির সময় ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণে হাঁটু ও মাসলে বাড়তি চাপ পড়ে। এর জন্যও পিঠে ব্যথা হতে পারে।
জরায়ু বড় হয়ে যাওয়া
সন্তানসম্ভবা অবস্থায় জরায়ু বড় হয়ে যায় বলে তলপেটের মাসল ও কোমরে চাপ পড়ে। এর থেকেও পিঠে ব্যথা হতে পারে। এছাড়া বাচ্চাকে ব্রেস্টফিড করানোর সময় শরীরের ভঙ্গী ঠিক না থাকলে ও ক্যালসিয়ামের অভাব হলেও পিঠে ব্যথা হতে পারে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, পেটের মাসলের ওভারস্ট্রেচিং। আমাদের দাঁড়ানোর ভঙ্গিমা ঠিক রাখার জন্য পেট ও পিঠের মাসলের সামঞ্জস্য থাকা জরুরি। কিন্তু প্রেগন্যান্সির পরে তা অনেক সময় হারিয়ে যায়। মেরুদণ্ড তার স্বাভাবিকত্ব কিছুটা ব্যহত হয়। এই সমস্যা হলে ঠিক সময়ে যদি সমস্যা ধরা না পড়ে ও চিকিৎসা শুরু না হয় তাহলে এই ব্যথা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। অনেক সময় প্রেগন্যান্সির পরে অন্য কিছু অসুখ দেখা দেয়। যেমন অ্যাকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস, ডিস্ক প্রোল্যাপ্স। এই সমস্যা প্রেগন্যান্সির জন্য হচ্ছে আবার তা আপনাআপনি সেরে যাবে ভেবে অনেকে প্রথমেই চিকিৎসা করান না। যখন চিকিৎসা শুরু হয় তখন অনেক দেরি হয়ে যায় বলে ব্যথার থেকে রেহাই পেতেও সময় লাগে।
কিন্তু সিজারের জন্য কি পিঠে, কোমরে ব্যথা হয় না?
সাধারণত হয় না। সিজারের আগে যে স্পাইনাল অ্যানাস্থেশিয়া করা হয় তার জন্য কোমরে বা মাথায় ব্যথা হতে পারে। সিএসএফ নামে মস্তিষ্কে সুষুম্না-রস বেশি ক্ষরণের জন্য কিংবা বিশেষ কিছু জটিলতার জন্য। যদিও এই সমস্যা খুবই বিরল এবং চিকিৎসায় পুরোপুরি সেরে যায়। কাজেই সন্তান হওয়ার পর তাকে কোলেপিঠে বড় করতে হলে, মায়ের খেলাধুলো করতে হলে প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিজেকে ফিট রাখতে হবে। সেই কারণে অন্য সমস্যাকে কাছে ঘেঁষতে দেওয়া চলবে না।
যোগাযোগ : ৯৪৩৩৮৯০৩১৪